বিশ্বকাপে আফগানিস্তানকে হেসে-খেলে হারালো বাংলাদেশ। সাউদাম্পটে সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ড নৈপূণ্যে ৬২ রানের জয় পেলো টাইগাররা। এ জয়ে ৭ পয়েন্ট নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে টপকে গেলো মাশরাফিবাহিনী।
টার্গেটটা বড় হলেও অসম্ভব ছিল না। শুরুটাও মন্দ করেননি আফগানিস্তানের দুই ওপেনার গুলবাদিন নাইব এবং রহমত শাহ। দলীয় ৪৯ রানের সময় আফগান শিবিরে প্রথম আঘাত হাঁনেন সাকিব আল হাসান। ১১তম ওভারে প্রথম বল করতে এসেই রহমত শাহকে তামিমের তালুবন্দ্বী করান। হাশমতুল্লাহ শহিদীকে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে দেননি মোসাদ্দেক। ২ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়া আফগানদের দ্বিগুণ শক্তি দিয়ে চেপে ধরে বাংলাদেশ। অ্যাটাকিং ফিল্ডিং সাজিয়ে বল করতে থাকেন সাকিব-মিরাজ-মোসাদ্দেকরা। রানের গতি কমতে থাকায় বাড়তে থাকে চাপ, খেই হারিয়ে সাকিবের ফাঁদে একে একে পা দিতে থাকেন আসগর আফগান, মোহাম্মদ নবীরা। সাকিবের তৈরি করে দেয়া অবস্থান শেষ পর্যন্ত ধরে রাখেন সাইফুদ্দিন-মোস্তাফিজ-মাশরাফিরা।
সপ্তম উইকেট জুটিতে ভয় ধরানোর চেষ্টা করেন সামিউল্লাহ সেনওয়ারি এবং নাজিবুল্লাহ জাদরান। তবে সেই পথেও বাধা হয়ে দাঁড়ান সাকিব আল হাসান। ২৩ রানে নজিবুল্লাহকে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে নামের পাশে ৫ উইকেট লেখান সাকিব।
শেষ দারুণ বোলিং করেন মোস্তাফিজ এবং সাইফুদ্দিন। সামিউল্লাহ সেনওয়ারির অপরাজিত ৪৯ রান তাই শুধু ব্যাবধানটাই কমিয়েছে।
এর আগে বাঁচা-মরার ম্যাচে লড়াইয়ের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। সাউদাম্পটনে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৬২ রান তুলেন টাইগাররা।
ম্যাচের আগে থেকেই বেশি আলোচনা হচ্ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং বনাম আফগানিস্তানের বোলিং নিয়ে। বাংলাদেশ দলের দিক থেকে বেশ কয়েকবার একথা বলতে হয়েছে যে, রশিদ খান এবং মুজিব-উর রহমানকে ভয় পাচ্ছে না টাইগাররা। আর তাই ম্যাচে এ দুই স্পিনারের দিকে ছিল বাড়তি নজর।
রশিদ-মুজিব জুজু কাটানোর চেষ্টা করেছেন টাইগার ব্যাটম্যানরা। অন্তত সাকিব-মুশফিক-মাহমুদুল্লহর ব্যাটিং দেখে তেমনটাই মনে হচ্ছিল। কিন্তু সফলতা পাওয়া যায়নি। ইনিংসে আলো ছড়িয়েছেন আফগান স্পিনারাই। তারমধ্যেও নিজেদের ব্যাটিং শক্তিটাও দেখিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৬২ রান তুলতে সক্ষম হয়েছে।
সাউদাম্পটনের এই পিচেই ভারতের বিপক্ষে নিজেদের সবশেষ ম্যাচ খেলেছে আফগানিস্তান। ওই ম্যাচে আগে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ভারত তুলেছিল ২২৪ রান। এই রান তাড়া করতে গিয়েও ১১ রানে হেরেছে আফগানরা।
এদিন টসভাগ্য সহায় হয়নি বাংলাদেশের। বাধ্য হয়েই আগে ব্যাট করতে নামতে হয় টাইগারদের। শুরুতেই আঘাত হানেন মুজিব-উর রহমান। এদিন তামিমের সঙ্গে ওপেনিং করতে আসা লিটন দাসকে ফেরান ১৬ রানে। সাকিব-তামিম জুটি বেশ ভালো খেলছিল। যদিও স্পিনারদের বিপরীতে অস্বস্তি দেখা গেছে তামিমের ব্যাটে। তবে সাকিব ছিলেন তুলনামুলক বেশি সাবলীল। ৩৬ রানে মোহম্মদ নবীকে ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন তামিম। দারুণ ফর্মে থাকা সাকিব আল হাসানের ব্যাট এদিনও হেসেছে। মুজিবের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ক্যারিয়ারের ৪৫তম অর্ধশতক তুলে নেন সাকিব। একইসঙ্গে ডেভিড ওয়ার্নারকে টপকে বিশ্বকাপের চলতি আসরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকের তালিকায় উঠে গেছেন সাকিব।
সাকিব ফেরার পর দলের হাল ধরেন মুশফিক। পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নামা সৌম্য সরকার ছিলেন নিষ্প্রভ। ১০ বলে ৩ রান করে তিনিও শিকার হন মুজিবের। মুশফিকের সঙ্গে মাহমুদুল্লহর ৫৬ রানের জুটি দলকে দুইশ’ পারা করায়। মুজিব-রশিদ-নবীদের বিপক্ষে সুবিধা করতে না পারা মাহমুদুল্লাহ ফেরেন ৩৮ বলে ২৭ রানে।
একে একে সতীর্থদের বিদায় নিতে দেখা মুশফিক একপাশ আগলে দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন। শেষ দিকে তাকে দারুণ সঙ্গ দেন এক ম্যাচ পর দলে ফেরা মোসাদ্দেক। ৮৩ রানের নায়কোচিত ইনিংস খেলে ফেরেন মুশি। মোসাদ্দেক হোসেন করেন ২৪ বলে ৩৫ রানের কার্যকরি ইনিংস।
বল হাতে সবচেয়ে সফল মুজিব। ১০ ওভারে ৩৯ রান দিয়ে তিনি তুলে নেন ৩ উইকেট। রশিদ খান ব্যাটসম্যানদের অসুবিধায় ফেললেও সফলতা সেভাবে পাননি। ১০ ওভারে ৫২ রান খরচা করলেও তিনি কোনো উইকেট পাননি।
স্কোর
বাংলাদেশ ২৬২/৭ (৫০)
লিটন দাস ১৬ (১৭)
তামিম ইকবাল ৩৬ (৫৩)
সাকিব আল হাসান ৫১ (৬৯)
মুশফিকুর রহিম ৮৩ (৮৭)
সৌম্য সরকার ৩ (১০)
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ২৭ (৩৮)
মোসাদ্দেক হোসেন ৩৫ (২৪)
মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ২* (২)
বোলার
মুজিব-উর রহমান ১০-০-৩৯-৩
দৌলত জাদরান ৯-০-৬৪-১
মোহাম্মদ নবী ১০-০-৪৪-১
গুলবাদিন নাইব ১০-১-৫৬-২
রশিদ খান ১০-০-৫২-০
রহমত শাহ ১-০-৭-০
টার্গেট ২৬৩।
আফগানিস্তান ২০০/১০ ()
গুলবাদিন নাইব ৪৭ (৭৫)
রহমত শাহ ২৪ (৩৫)
আসগর আফগান ১১ (৩১)
মোহাম্মদ নবী ২০ (৩৮)
সামিউল্লাহ সেনওয়ারি
ইকরাম আলি খিল ১১ (১২)
নাজিবুল্লাহ জাদরান ২৩ (২৩)
রশিদ খান ২ (৩)
বোলার
মাশরাফি
মোস্তাফিজ
সাইফুদ্দিন
সাকিব ১০-১-২৯-৫
মেহেদী
মোসাদ্দেক