এজি লাভলু, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ায় পর্ণগ্রাফির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান। তিনি জিরো টলারেন্স ঘোষণা দিয়ে পর্ণগ্রাফির বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিশ সুপারের নির্দেশ পেয়ে পুলিশ জেলাব্যাপী অভিযান চালিয়ে পর্ণ ভিডিও সংরক্ষণ ও মোবাইলে আপলোড করার অপরাধে গত তিন দিনে বিভিন্ন স্থান থেকে ২১ জন কম্পিউটার অপারেটরকে আটক করেছে। এদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ১৮টি।
আটকৃতদের কাছ থেকে অশ্লীল ভিডিও ও ছবি এবং ২১টি কম্পিউটার জব্দ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন গজিয়ে ওঠা কম্পিউটার দোকানের অপারেটররা পর্ণ ছবি ও ভিডিওর রমরমা ব্যবসা করছিল। এতে বেড়ে যাচ্ছিল ধর্ষণ প্রবণতা। পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কন্ট্রোল রুম সুত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলায় মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে পর্ণ ভিডিও সংরক্ষণ ও মোবাইলে আপলোড করার ১৮ জন কম্পিউটার অপারেটরকে গ্রেফতার ও ৫টি কম্পিউটার জব্দ করেছে পুলিশ।
এদের মধ্যে সদরে ৬ জন, রৌমারী উপজেলায় ৪ জন, রাজিবপুরে ৩ জন, ভূরুঙ্গামারীতে ২ জন এবং কচাকাটা, উলিপুর, চিলমারী উপজেলায় একজন করে রয়েছেন। আটককৃতদের নামে পর্ণগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দেয়া হয়েছে।
এর আগে সোমবার কুড়িগ্রাম সদর থেকে একই অপরাধে ৩ জনকে কম্পিউটারসহ গ্রেফতার করে পুলিশ।
কুড়িগ্রাম সদর থানার ওসি মাহফুজার রহমান জানান, গত মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে কম্পিউটার ও ডিভাইজসহ ৬ জনকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ঘনেশ্যামপুরের আশিকুর রহমান (২১), দোয়ালী পাড়ার আল-আমিন(২০), ভোগবতিপুরের নজরুল ইসলাম (২২),কাজলদহের রকি আহমেদ (১৮) এবং পাঁচগাছী ইউনিয়নের দক্ষিণ সিতাইঝাড়ের শফিকুল ইসলাম (৩৫) ও গারুহারার আপেল রানা (১৮)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, জেলা ও উপজেলা শহরের অলিগলিতে ছাড়াও গ্রামাঞ্চলের ছোট-বড় হাট-বাজারে অসংখ্য কম্পিউটার ও লোডের দোকান গড়ে ওঠেছে। এসব দোকানের অধিকাংশতেই অশ্লীল ভিডিও ও ছবির কালেকশন রয়েছে।
হাতে হাতে স্মার্টফোন থাকায় এদের বেশিরভাগ কাস্টমার আবার কিশোর-তরুণ। মাত্র ২০-৫০ টাকায় পর্ণ ছবি ও ভিডিও আপলোড করেন এরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পর্ণ ছবি আপলোড করার জন্য একাধিক হারডিস্ক ব্যবহার করেন অপারেটররা। রাখেন গোপন স্থানে। ফলে অভিযান চালালেও অনেক সময় ধরা যায় না। এসব ছবি ও ভিডিও রংপুর বিভাগীয় শহরের বিভিন্ন দোকানে পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক অপারেটর।
সূত্র আরো জানায়, সহজে মোবাইলে পর্ণ ভিডিও দেখার ফলে কম বয়সী তরুণদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে ধর্ষণ প্রবণতা। বাড়ছে শিশু ধর্ষণের ঘটনাও। তরুণদের দ্বারা ঘটছে খুনের ঘটনাও।
এছাড়া পড়াশোনায় অনেকেই অমনোযোগী হয়ে যাচ্ছে। ফলে অভিভাবকরা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হলেও প্রশাসনিক শৈথিল্যের কারণে এতোদিন প্রতিকার করা যায়নি এই পর্ণগ্রাফি। তবে কুড়িগ্রামের বর্তমান পুলিশ সুপার কয়েকদিন আগে যোগদানের পর এ বিষয়টি আমলে এনে সর্বাত্মক অভিযানের নির্দেশ দেন। ফলে প্রতিদিন ধরা পড়ছে অপকর্মকারীরা।
কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান জানান, কুড়িগ্রামের তরুণদের জন্য একটি সুস্থ পরিবেশ তৈরির জন্য সন্ধ্যার পর আড্ডা বন্ধ ও পর্ণগ্রাফির বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চলছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। মাদক, ধর্ষণসহ এসব গুরুতর অপরাধের ব্যাপারে পুলিশের জিরো টলারেন্সে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।