ads
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:২৭ অপরাহ্ন

সম্প্রীতির বাংলাদেশ: মুসলমানদের রাতজেগে মন্দির-গির্জা পাহারায় অভিভূত বিশ্ব

সৃষ্টিবার্তা ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ৮ আগস্ট, ২০২৪
  • ১৯ বার পঠিত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুর্নিবার বাধার মুখে সোমবার প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছাড়েন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেদিন থেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে থানা ছাড়তে থাকেন পুলিশ সদস্যরা।

এক পর্যায়ে কর্মবিরতিতে চলে যায় পুলিশ।
এমতাবস্থায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি ও উপাসনালয়ের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

অবশ্য ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির সময়ই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয় পাহারা দিতে ছাত্রদের আহ্বান জানানো হয়।

পরে আ.লীগ সরকারের পতনের পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি, স্থাপনা ও উপাসনালয়ের ওপর যেন আক্রমণ না হয়; সে বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার বার্তা দেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র ও ইসলামি স্কলাররা।

এছাড়া মসজিদের মাইক থেকে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ও মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা পাহারা দিতে দেশবাসীকে আহ্বান জানান দেশের প্রসিদ্ধ ইসলামি ব্যক্তিত্ব শায়েখ আহমাদুল্লাহ, মিজানুর রহমান আজহারীসহ আরও অনেকে।

দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও তার দলীয় কর্মীদের এ বিষয়ে সতর্কবার্তা দেন। তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের ওপর যেন কোনো আক্রমণ না হয়। তাদের রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। ’

বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামের আমির শফিকুর রহমানও একইরকম বার্তা দেন তার দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে।

তিনি বলেন, দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাই, কোনো দুষ্কৃতকারী যাতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ওপর কোনো ধরনের হামলা যাতে না হয়, সে জন্য পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে। সংখ্যালঘুদের জানমাল, উপাসনালয় ও ঘরবাড়ি রক্ষা করতে হবে।

রাজনৈতিক দলগুলো ও ইসলামি স্কলারদের এ আহ্বানে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা স্পষ্ট। মন্দির-গির্জা পাহারা দিচ্ছেন ছবি পোস্ট করতে দেখা যাচ্ছে অনেককে। এ সম্প্রীতির বাংলাদেশ দেখে অভিভূত গোটা বিশ্ব।

গত সোমবার থেকেই রাতভর জেগে দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা পাহারা দিয়ে আসছেন ছাত্র-জনতা। যেখানে রয়েছেন স্কুল-কলেজ ও কওমি মাদরাসাছাত্ররা। স্থানীয়রাও তাদের সহায়তা করছেন। এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে দেখা যাচ্ছে জামায়াত-শিবিরের ও হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের।

গত সোমবার থেকে বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোরের বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধি থেকে প্রাপ্ত খবর বলছে –

গাজীপুরে মন্দিরসহ বিভিন্ন সরকারি দফতরের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন ‘ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর সদস্যরা।

রাজনৈতিক দলটির গাজীপুর শাখার সভাপতি এসএম ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের বাড়ি কিংবা মন্দিরে হামলা রুখতে আমরা পাহারায় বসেছি। দলের প্রধানের নির্দেশে সারা বাংলাদেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দির পাহারা দেওয়া হচ্ছে। আমরা বাঙালি, সবাই ভাই ভাই। কেন্দ্র থেকে পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত আমরা এই দায়িত্ব পালন করে যাব। ’

জানা যাচ্ছে, ময়মনসিংহে হিন্দুদের মন্দির পাহারায় ছিলেন ‘রক্ত দানে সুফফা ফাউন্ডেশন’র সদস্যরা। এছাড়া মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় দলে দলে ভাগ হয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়ে পাহারায় বসেছেন ছাত্র-জনতা। দুর্গাবাড়ি আর্যধর্ম জ্ঞান প্রদায়িনী সভা, আঠারোবাড়ি বিল্ডিং দুর্গামাতার মন্দির, কালিবাড়ি মন্দির, মহারাজা রোড কানাই বলাই মন্দির, নাগবাড়ী মন্দির ও ময়মনসিংহ চার্চ তারা পাহারা দিয়ে যাচ্ছেন রাতভর।

সিলেটের সুনামগঞ্জের সব মন্দির পাহারায় মাদ্রাসারছাত্ররা নিয়োজিত রয়েছেন। তারা রাত জেগে তো পাহারা দিচ্ছেনই, দিনেও পালা বদল করে নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলার কোথাও কোনো মন্দির বা সংখ্যালঘুদের বসতবাড়ি বা তাদের কাউকে হয়রানি, ভাঙচুর, হামলা হয়নি।

এদিকে জামায়াতে ইসলামী দলের চাঁদপুর শাখার সদস্যরা জেলার বিভিন্ন মন্দির পাহারার দায়িত্ব নিয়েছেন।

রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির নিয়মিত পাহারা দিয়ে যাচ্ছেন এলাকাবাসী। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরাও আছেন।

মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সংখ্যালঘুদের বাড়ি, মন্দির, গির্জাকে দুর্বৃত্তকারীদের হামলা ও ভাঙচুর থেকে রক্ষা করতে আহ্বান জানায় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি।

সে লক্ষ্যে বাণিজ্যিক শহরসহ চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি।

এ বিষয়ে ফেসবুকে পাওয়া গেছে বেশ কয়েকটি ছবি। যেখানে দেখা যাচ্ছে চট্টগ্রামে হাটহাজারী কালি মন্দির পাহারা দিচ্ছেন হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্ররা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নন্দীরহাট ও ফতেয়াবাদ এলাকার মন্দির পাহারা দিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত। ওবায়দিয়া মাদরাসার পাশে বৌদ্ধ মন্দির পাহারায় রয়েছেন তারা। আর নগরীর মন্দিরগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীরা পাহারারত রয়েছেন।

এদিকে ফরিদপুরে রামকৃষ্ণ মিশন রক্ষার্থে একটি টিম পাহারায় রয়েছেন। মন্দিরের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা দিয়েছে ফরিদপুর জেলা জামায়াতে ইসলাম। সিলেটের হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে শ্রী শ্রী বুড়া শিববাড়ি রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন ছাত্র-জনতা ও মাদরাসাশিক্ষার্থীরা।

আখাউড়া কেন্দ্রীয় মন্দির রাধামাধব আখড়াসহ হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পাহারা দিচ্ছেন বিএনপি ও হেফাজতের নেতারা। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর টহলও লক্ষ্য করা যায়।

যশোরের চৌগাছায় হিন্দুদের মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থাপনা পাহারায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা নিয়োজিত রয়েছেন। দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এ উপজেলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও মন্দিরসহ ধর্মীয় স্থাপনা এবং জানমাল রক্ষায় ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন তারা।

কুমিল্লায় মন্দির পাহারায় প্রধান ফটকের সামনে লাঠি হাতে বসে ইসলামী আন্দোলনের কুমিল্লা মহানগর শাখার নেতৃবৃন্দরা। বরিশাল সদরের কালীবাড়ি রোডের মন্দির পাহারা দিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় সাবেক ছাত্রনেতা আবু মোহাম্মদ মাসুমের নেতৃত্বে রূপগঞ্জ থানা, রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ, মন্দির ও সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও সরকারি অফিসগুলোতে বিএনপি নেতাকর্মীদের পাহারা দিতে দেখা গেছে৷

রাজধানীর পুরান ঢাকায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও মন্দির পাহারা দিচ্ছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি তদারকি করছে ছাত্র সংগঠনটি।

শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আসাদুজ্জামান আসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লার নেতৃত্বে পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজারের বিভিন্ন মন্দির পাহারা দেন নেতাকর্মীরা।

এদিকে গণমাধ্যম সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, পঞ্চগড়ে রাত জেগে রাণী রাসমনী মন্দির পাহারায় ছিলেন জেলার আটোয়ারীর রানিগঞ্জের আবুল কালাম আজাদ টিপু ও কালাম নামের দুই যুবক। তারা সরকার পতনের দিন থেকেই রানীগঞ্জের রাণী রাস মনি মন্দির রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন।

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। শরীয়তপুরে রাত জেগে মন্দির পাহারা দিচ্ছেন জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

ডামুড্যা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী হরিসভা মন্দির রাতভর পাহারা দিয়ে যাচ্ছেন জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা।

রাজধানীর সব মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জার নিরাপত্তায় কাজ করে যাচ্ছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের নেতাকর্মীরা।

নোয়াখালীতে হিন্দু-খ্রিস্টানসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, তাদের মন্দির যেন না ভাঙতে পারে বাড়িঘরের পাহারা দিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির।

এছাড়া কিশোরগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, ভোলাসহ দেশের একাধিক স্থানের মন্দির ও উপাসনালয়ের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় ছাত্র-জনতা।

বরগুনায় আমতলীসহ বিভিন্ন উপজেলার মন্দিরসহ সব সরকারি স্থাপনা পাহারা এবং ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছেন ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

সংখ্যালঘুদের উপাসনালয় ও স্থাপনা রক্ষায় দেশবাসীর এগিয়ে আসার ঘটনায় অভিভূত সাধারণ মানুষ। তাদের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে যাচ্ছেন অনেকেই। বিশেষ করে স্কুল-কলেজের ছাত্র, কওমি মাদ্রাসাছাত্র ও জামায়াত-শিবির কর্মীদের রাতভর মন্দির পাহারা দেওয়ার ঘটনায় অভিভূত সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা মন্দির ও হিন্দু সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি পাহারা দিচ্ছে। বিষয়টা আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি। আমাদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ নতুন সরকার আসা পর্যন্ত সংখ্যালঘু এলাকা, প্রতিষ্ঠান ও মানুষকে তারা নিরাপত্তা দিক। ’

চলমান অস্থিরতায় বাংলাদেশের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ সংখ্যালঘুদের ওপর কোনো আক্রমণ ঘটেনি বলে দাবি করেছেন জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোবিন্দ প্রামাণিক।

মঙ্গলবার বাংলা আউটলুককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরে এদেশের হিন্দু সমাজ মনে করেছিল যে তাদের ওপর হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটবে। কিন্তু গতকাল বিকালে জামায়াত ও বিএনপির নেতারা তাদের সব নেতাকর্মীদের হিন্দুদের বাড়িতে হামলা-লুটপাট যাতে না হয় এবং মন্দিরে যেন পাহারার ব্যবস্থা করা হয় সেই নির্দেশ দেয়। গতকাল থেকে দেখেছি তারা পাহারা দিয়েছেন। যে কারণে সাধারণভাবে হিন্দুদের ওপর কোনো ধরনের হামলা হয়নি বা কোনো মন্দিরে ভাঙচুর হয়নি৷

সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

Prayer Time Table

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৪:৩০
  • ১১:৫৯
  • ১৬:২৩
  • ১৮:১১
  • ১৯:২৫
  • ৫:৪২
ইঞ্জিনিয়ার মোঃ ওয়ালি উল্লাহ
নির্বাহী সম্পাদক
নিউজ রুম :০২-৯০৩১৬৯৮
মোবাইল: 01727535354, 01758-353660
ই-মেইল: editor@sristybarta.com
© Copyright 2023 - SristyBarta.com
Develop By : BDiTZone.com
themesba-lates1749691102