বঙ্গোপসাগরের সেন্টমার্টিন দ্বীপের অদূরে মাছ ধরতে যাওয়া বাংলাদেশি ফিশিং ট্রলার লক্ষ করে গুলি করেছে মিয়ানমার নৌবাহিনী। এতে এক জেলে নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও দুই জেলে। এ ছাড়া ৬০ মাঝিমাল্লাসহ ছয়টি ফিশিং ট্রলার অপহরণ করে মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের ট্রলার মালিকরা জানিয়েছেন, গতকাল বুধবার (০৯ অক্টোবর) দুপুরে সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমের মৌলভীর শিল নামে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় এ ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, গতকাল বিকেল আড়াইটার দিকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও মিয়ানমার মধ্যবর্তী বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে বাংলাদেশের মাছ ধরার নৌকায় মিয়ানমারের নৌবাহিনী গুলি করে এবং ছয়টি বোট ৬০ জন জেলেসহ আটক করে। গুলির ঘটনায় একজন (ওসমান গনি, পিতা : বাঁচা মিয়া, সাং: কোনাপাড়া, শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং) নিহত হয়েছেন এবং দুজন আহত হয়েছে। পরবর্তীতে আজ বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় মিয়ানমার নৌবাহিনী বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের কাছে ১টি নৌকাসহ জেলেদের হস্তান্তর করে। বর্তমানে কোস্টগার্ডের তত্ত্বাবধানে ১টি নৌকাসহ মৃত ব্যক্তির লাশসহ ১১ জন জেলে শাহপরীর দ্বীপ জেটিতে অবতরণ করলে ও সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী জানা যায়, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ অন্যান্য ৫টি বোটসহ সাতচল্লিশ জেলেসহ শাহপরীর দ্বীপ ঘাটে অবতরণ করছে।
মিয়ানমার নৌবাহিনীর গুলিতে নিহত জেলে মো. ওসমান শাহপরীর দ্বীপের কোনারপাড়ার বাঁচা মিয়ার ছেলে। হতাহতরা সবাই শাহপরীর দ্বীপের বাজারপাড়ার সাইফুল কোম্পানির মালিকানাধীন ট্রলারের জেলে বলে জানা গেছে।
অপহরণ করা ছয়টি ট্রলারের মালিকরা হলেন শাহপরীর দ্বীপের মিস্ত্রীপাড়ার মুসলিম মিয়ার ছেলে মতিউর রহমান, মৃত আলী হোছনের ছেলে আবদুল্লাহ, তার ভাই আতাউল্লাহ এবং উত্তরপাড়ার ছৈয়দ মাঝির ছেলে মো. আছেম। ট্রলারগুলোয় ৬০ জন মাঝিমাল্লা ছিলেন।
ট্রলার মালিক সাইফুল বলেন, বুধবার সাগরে মাছ ধরার সময় হঠাৎ মিয়ানমার নৌবাহিনীর সদস্যরা ধাওয়া করে গুলি করে। এতে তার ট্রলারের তিন জেলে গুলিবিদ্ধ হন। এর মধ্যে একজন মারা যান। এরপর ছয়টি ট্রলারসহ মাঝিমাল্লাদের ধরে মিয়ানমারের দিকে নিয়ে যায়। এর মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার তার ট্রলারটি ছেড়ে দেওয়া হয়। নিহত এবং আহত জেলেদের নিয়ে ট্রলারটি শাহপরীর দ্বীপের জেটি ঘাটে এসে পৌঁছেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোস্টগার্ডের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন বিজিবির টেকনাফস্থ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ।
কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার লুৎফুল লাহিল মাজিদ বলেন, তিন জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তার মধ্যে একজন মারা গেছেন। আহত দুজনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রথমে একটি ট্রলার লাশ নিয়ে এসেছিল, বাকি পাঁচটি ট্রলারসহ সাতচল্লিশ জেলে ট্রলারের মাধ্যমে ফিরছে। তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
টেকনাফ নৌ পুলিশের ইনচার্জ মুহাম্মদ আবুল কাশেম বলেন, মায়ানমারের নৌবাহিনীর গুলিতে নিহত ওসমানকে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।