অর্থকষ্টে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তারের কারাভোগ করছে মিনু আক্তার।
ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে। বিষয়টি জানাজানির পর মূল আসামি কুলসুম ও মিনুর ছবি সম্বলিত বালামসহ কারা কর্তৃপক্ষকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
কুমিল্লার ময়নামতির সাত্তার বাজার এলাকার মিনু আক্তার। ৫ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামীর মৃত্যু হয়। সংসারের আর্থিক দুরবস্থার সুযোগে মর্জিনা নামে এক নারী তাকে টাকার লোভ দেখিয়ে চট্টগ্রামে এনে পরিচয় করিয়ে দেন হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী কুলসুমের সাথে। কুলসুম তার বদলে কারাগারে যাওয়ার প্রস্তাব দিলে রাজি হন মিনু। বিনিময়ে তিন সন্তানের ভরণ পোষণ ও এককালীন টাকা দেয়ার লোভ দেয়া হয়। তিন মাসের মধ্যে কারাগার থেকে বের হওয়ার আশ্বাস দিলে ২০১৮ সালে কুলসুম সেজে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন মিনু।
২০০৭ সালে পোশাককর্মী কহিনুরকে শ্বাসরোধে করে গ্রেপ্তারের পর ২০০৯ সালে জামিন পান কুলসুম। আদালত ২০১৭ সালে কুলসুমকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়ার পর থেকে পলাতক রয়েছে সে। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম চতুর্থ অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত অতিরিক্ত পিপি মোহাম্মদ নোমান চৌধুরী বলেন,’মিনু আক্তারকে কুলসুম আক্তার সাজিয়ে আদালতে পেশ করা হয়েছে। এটিও একটা পরিকল্পনা। একজন ব্যক্তিকে জেলখানায় ঢুকিয়েছে, তার ছবি কিন্তু আছে। এ বিষয়ে আদালত একটি প্রতিবেদন উচ্চ আদালতে প্রেরণ করবে।’
অবশেষে মিনুর সহায়তায় এগিয়ে আসেন এক আইনজীবী। আদালতে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দেন তিনি। মিনুর আইনজীবী গোলাম মওলা মুরাদ বলেন,’তার বাচ্চাদেরকে দেখার পর আমি বিষয়টি মানবিক কারণে আদালতে আনার কথা চিন্তা করলাম। তারপর জেলার বিষয়টি নজরে আনলেন। এরপর আদালত নির্দেশ দিলো তাকে কোর্টে হাজির করার জন্য।’
গত ১৮ই মার্চ কারা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকৃত ঘটনা খুলে বলেন মিনু। পরে বালাম পরীক্ষা করে দুইজনের নাম ঠিকানা এক হলেও ছবিতে ভিন্নতা পায় কারা কর্তৃপক্ষ। মো. শফিকুল চট্টগ্রাম কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইসলাম খান বলেন,’সে জানায় তার প্রকৃত নাম হলো মিনু। ২০০৭ সালে সে কারাগারে এসেছে। সেই সালের রেজিস্টারে বিচারাধীন মামলা আমরা দেখেছি। তার দেয়া নাম-ঠিকানা সঠিক আছে। চেহারায় একটু পরিবর্তন আছে।’
বর্তমানে মামলাটি আসামিপক্ষের আপিলে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।