শরীয়তপুরে এক স্ত্রীর বিরুদ্ধে যৌতুক মামলা করেছেন তার স্বামী। স্বামীর যৌতুক মামলায় আসামি স্ত্রীর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে শরীয়তপুর পালং আমলি আদালতের বিচারক মো. নেজবাউল এই আদেশ দেন।
স্ত্রী মাধবী সরকার (২৪) যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার বাসুয়ারী ইউনিয়নের বিশ্বজিত সরকার ও অর্চনা সরকার দম্পতির মেয়ে। আর স্বামী নয়ন দাসের (২৭) শরীয়তপুর সদর পৌরসভার কাশাভোগ গ্রামের নান্টু দাসের ছেলে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, গেল ১০ নভেম্বর শরীয়তপুর পালং আমলি আদালতে যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারায় স্ত্রী মাধবীসহ ৩ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন স্বামী নয়ন। আজ মামলার ৩ জন আসামিকে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেন আদালত। আদালতে ২ ও ৩ নম্বর আসামি হাজির হলে তাদেরকে জামিন মঞ্জুর করা হয়। তবে ১ নম্বর আসামি মাধবী হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভালোবেসে ২০২০ সালের জুলাই মাসে যশোরের মাধবী সরকার সঙ্গে শরীয়তপুরের নয়ন দাসের বিয়ে হয়। বিয়ের সাড়ে ৪ মাস পর থেকে নয়নকে যশোরে অথবা গোপালগঞ্জ শহরে বাড়ি করে দিতে চাপ দিতে থাকে মাধবীর পরিবারের লোকজন। তবে স্ত্রীর নামে বাড়ি করে দিতে না পারায় স্বামীর বাড়ি থেকে কৌশলে মাধবীকে নিয়ে যান তার মা-বাবা। তবে যৌতুক ছাড়া সংসারে ফেরাতে গত এক বছর ধরে স্ত্রীসহ তার পরিবারকে অনুরোধ করে আসছিল স্বামীর পরিবারের লোকজন। একপর্যায়ে আইনজীবীর মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হলেও স্বামীর সংসারে আসেনি স্ত্রী মাধবী সরকার। এরপর ১০ নভেম্বর শরীয়তপুর পালং আমলি আদালতে যৌতুক নিরোধ আইন ৩ ধারা মতে নালিশি মামলা দায়ের করেন স্বামী নয়ন দাস।
মামলায় স্ত্রী মাধবী সরকার (২৪), তার মা অর্চনা সরকার (৩৭) ও বাবা বিশ্বজিত সরকারকে (৪০) আসামি করা হয়। আজ ২৯ ডিসেম্বর অর্চনা ও বিশ্বজিত আদালতে সশরীরে হাজির হলে তাদের জামিন মঞ্জুর করে আদালত। আর মাধবী হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
মামলার বাদী নয়ন দাস বলেন, ভালোবেসে বিয়ে করেও যৌতুক দিতে না পারায় গত এক বছর ধরে স্ত্রীর পরিবারের নির্যাতনের শিকার হচ্ছি। মীমাংসার জন্য ওদের স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে একাধিকবার বসা হলেও স্ত্রীর পরিবার গ্রাম্য আদালতের আদেশ মানে নাই। অবশেষে যৌতুক ছাড়া সংসারে ফেরাতে ব্যর্থ হয়ে কোনোপ প্রকার মীমাংসা না করতে পেরে আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। তবে ওরা প্রভাবশালী হওয়ায় আমি ন্যায় বিচার পাচ্ছি না। আসামিরা যাওয়ার সময় মামলা প্রত্যাহার না করলে আমার খবর আছে বলে হুমকি দিয়ে গেছে।
বাদী পক্ষের আইনজীবী মুরাদ হোসেন মুন্সি বলেন, ভালোবেসে বিয়ের সাড়ে চার মাস পর থেকে স্বামীর নয়ন দাসকে বাড়ি করে দিতে দশ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে স্ত্রীসহ তার মা-বাবা। কিন্তু স্বামীর পরিবার তাদের দাবি মেটাতে না পারায় গত কয়েক মাস ধরে স্বামীর সংসার করবে না বলে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিল স্ত্রী মাধবী সরকার ও তার পরিবার। অবশেষে একাধিকবার মীমাংসায় ব্যর্থ হয়ে স্বামী নয়ন দাস যৌতুক নিরোধ আইন ৩ ধারায় মামলা দায়ের করলে আদালত দুই আসামি হাজির হলে তাদেরকে জামিন মঞ্জুর করলেও ১ নম্বর আসামি মাধবী হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
এদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী মো. তারিকুল ইসলাম সোহাগ বলেন, পারিবারিক বিরোধের কারণে আমার তিনজন মক্কেলকে মামলা দিয়ে আসামি করা হয়েছে। আদালতে জামিন আবেদন করলে দুইজনকে জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক। একজন হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।