ads
সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ০৩:৩৯ অপরাহ্ন

ইউএস ডলারের মূল্য বেঁধে দিয়েও কাজ হচ্ছে না

রিপোর্টারের নাম
  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০২২
  • ৬১ বার পঠিত

সব পক্ষের সঙ্গে বসে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি ডলারের মূল্য ৮৯ টাকা বেঁধে দিয়েছে। কথা ছিল, সব ব্যাংক এই দরে ডলার কেনাবেচা করবে। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি।

ব্যাংকগুলো আমদানিকারকদের কাছে এখনও ৯২ থেকে ৯৩ টাকা নিচ্ছে। আর খোলাবাজারে এখন ডলার বিক্রি হচ্ছে ৯৬-৯৭ টাকায়। বিদেশে হুন্ডিতেও ৯২-৯৩ টাকা দরে প্রবাসী আয় সংগ্রহ করা হচ্ছে। ফলে বৈধ পথে প্রবাসী আয় আসা কমে গেছে।

সদ্য বিদায়ী মে মাসে ১৮৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক আগের মাস এপ্রিলের চেয়ে ১২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার কম। এছাড়া গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮ কোটি ৫৭ লাখ ডলার কম।

বেশি দরে গ্রাহককে বাধ্য করা হচ্ছে

দর বেঁধে দেওয়ার পর গত দুদিনে এই রেটে এলসি নিষ্পত্তি করতে পারেননি অনেক আমদানিকারক, বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত ছোটরা। এছাড়া নতুন এলসি খুলতেও বেশি রেট দাবি করা হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করে এক আমদানিকারক বলেছেন বেঁধে দেওয়া দামে আমদানিকারকদের কাছে ডলার বিক্রি করতে চাইছে না ব্যাংকগুলো। সংকটের দোহাই দিয়ে অধিকাংশ ব্যাংক আমদানি এলসি নিষ্পত্তিতে বেশি রেট দাবি করছে। যে সব গ্রাহক বেশি রেট দিতে রাজি হচ্ছে কেবল তাদের এলসি খোলা হচ্ছে। অন্যদের নিজ উদ্যোগে ডলার সংগ্রহের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া নতুন এলসি খোলা থেকেও বিরত রয়েছে অনেক ব্যাংক। এতে বিপাকে পড়ছেন আমদানিকারকরা।

বেসরকারি খাতের একটি ব্যাংক মঙ্গলবার (৩১ মে) চট্টগ্রামের একটি শীর্ষ খাদ্যপণ্য আমদানিকারকের কাছে প্রতি ডলারের জন্য ৯১ টাকা ৭৫ পয়সা দাম নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রহমান বলেন, অভিন্ন হার ঘোষণার পরও কিছু কিছু আমদানিকারক অভিযোগ করেছেন যে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত রেটে ডলার পাচ্ছেন না। বিষয়টি দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন তিনি। তিনি জানান, এখনও খোলা বাজারে প্রতি ডলারের জন্য ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে প্রায় ৯৬-৯৭ টাকা।

যা বলছেন ব্যাংকের কর্মকর্তারা

বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকের কর্মকর্তা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে না। ফলে বাজার থেকে বেশি দামে ডলার সংগ্রহ করে এলসি নিষ্পত্তি করতে হচ্ছে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, রেমিট্যান্স ও রফতানিকারকদের কাছ থেকে অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারিত দরে ডলার কিনতে পারছে না তারা। ফলে আমদানিতেও নির্ধারিত দরে ডলার বিক্রি করতে পারছে না অনেক ব্যাংক।

এ প্রসঙ্গে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রেমিট্যান্সের দর হওয়া উচিত ৯৪ টাকা থেকে ৯৫ টাকা। তবেই অপ্রাতিষ্ঠানিক চ্যানেলের সঙ্গে দরে কিছুটা সামঞ্জস্যতা আসবে। এছাড়া আমদানিতে ৮৯ টাকার পরিবর্তে ৯৩ টাকা এবং রফতানিকারকদের জন্য ৯১ টাকা দর ঠিক করা উচিত।

এ প্রসঙ্গে এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলারের যে অভিন্ন হার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, সেটি সব ব্যাংকে পুরোপুরি কার্যকর হতে একটু সময় লাগবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক চাপ সামলাচ্ছে যেভাবে

আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার কারণে ডলারের ওপর বাড়ছে চাপ। এই চাপ সামাল দিতে একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক, অন্যদিকে ব্যাংকারদের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তাদেরও বিদেশ ভ্রমণ বাতিল করা হয়েছে। অর্থাৎ ডলার সাশ্রয়ী করতে নানামুখী তৎপরতার পরও যখন কাজ হচ্ছে না তখন বাধ্য হয়ে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমাতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি ঠিক রাখতে গত মে মাসেই পাঁচ দফায় টাকার মান কমাতে হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) প্রস্তাব পর্যালোচনা করে ডলারের মূল্য ৮৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রবাসী আয় আহরণ ও রফতানিকারকদের বিল নগদায়নের ক্ষেত্রে এ হার অনুসরণ করবে ব্যাংকগুলো। আর আমদানিকারকদের কাছে ডলার বিক্রির দাম নির্ধারণ করা হয় ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা।

এদিকে সরবরাহ বাড়াতে বাজারে রিজার্ভ থেকে মঙ্গলবার (৩১ মে) আরও ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে চলতি অর্থবছর বিক্রির পরিমাণ দাঁড়াল ৫৯৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক যথাসম্ভব চেষ্টা করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজন অনুযায়ী ডলার বিক্রি করছে, বিলাসী পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করছে ব্যাংকগুলোকে। রফতানি আয় নগদায়ন দ্রুত করার জন্য ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, বাজারে অস্থিরতা রোধে ডলারের দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এটা বাফেদা ও এবিবির প্রস্তাবের ভিত্তিতে করা হয়েছে। এরপরও যদি কোনও ব্যাংক আমদানিকারকদের কাছে বেশি রেট আদায় করে এবং তা বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে প্রমাণিত হয়, তা হলে সেই ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মুনাফার প্রবণতাই দর বাড়াচ্ছে?

বেশ কিছুদিন ধরেই অনেক ব্যাংক প্রবাসীদের কাছ থেকে ও রফতানিকারকদের থেকে ৯৫ টাকা পর্যন্ত দরে ডলার কিনেছে। আমদানিকারকদের কাছে তা বিক্রি করেছে ৯৬ থেকে ৯৮ টাকা পর্যন্ত। এই অভ্যাস ব্যাংকগুলোতে জেঁকে বসেছে।

উল্লেখ্য, খোলাবাজারে ডলারের দর উঠে যায় ১০২ টাকা। কিছু কিছু ব্যাংকেও নগদ ডলারের দাম ১০০ টাকার ওপরে উঠে যায়। এক্ষেত্রে অনেকেই বৈদেশিক মানি এক্সচেঞ্জ ও ব্যাংকগুলোর অতি মুনাফা করার প্রবণতাকে দায়ী করেন। অবশ্য ডলার সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করছে। এর অংশ হিসেবে বেসরকারি খাতের ১২টি ব্যাংকের ডলার কেনাবেচা ও মজুদের তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

প্রভাব ফেলছে বিদেশের এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো

সাধারণত দেশের ব্যাংকগুলো বিদেশের এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর কাছে প্রতিদিন ডলারের চাহিদা ও দাম নির্ধারণ করে দেয়। আবার অনেক সময় এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো প্রবাসী আয় সংগ্রহ করে দেশের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ডলারের দাম নিয়ে দর-কষাকষি করে। যেই ব্যাংক বেশি দাম দেয়, সেই ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করা হয়।

ব্যাংক খাতের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম ৮৯ টাকা বেঁধে দিলেও বাস্তবে ডলার কেনাবেচা হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি দামে। ডলারের সংকট কাটাতে ও নিজেদের প্রয়োজনে অনেক ব্যাংক তাই বেশি দামে বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় আনছে।

এদিকে দেশীয় মালিকানায় বিদেশে প্রতিষ্ঠিত এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনও নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি নেই। এছাড়া ডলারের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে রিয়া, মানিগ্রাম, ট্রান্সফাস্ট, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন,এক্সপ্রেস মানি, আইএমইসহ বড় এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো।

সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
ইঞ্জিনিয়ার মোঃ ওয়ালি উল্লাহ
নির্বাহী সম্পাদক
নিউজ রুম :০২-৯০৩১৬৯৮
মোবাইল: 01727535354, 01758-353660
ই-মেইল: editor@sristybarta.com
© Copyright 2023 - SristyBarta.com
Develop By : BDiTZone.com
themesba-lates1749691102