হাঙ্গেরি সীমান্ত পুলিশের বিরুদ্ধে এক অভিবাসীর মাথা ক্রুশ চিহ্ন এঁকে ন্যাড়া করার অভিযোগ করেছে ক্লিকএকটিভ নামে একটি এনজিও। হাঙ্গেরি-সার্বিয়া সীমান্তে এই ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছে সার্বিয়া ভিত্তিক এনজিওটি। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই অঞ্চলের সীমান্তে অভিবাসীদের উপর সহিংসতা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
মারধর, স্প্রে, টিয়ার গ্যাসের ব্যবহার এবং বর্ণবাদী আচরণের পর সার্বিয়া-হাঙ্গেরি সীমান্তে মরক্কো থেকে আসা এক অভিবাসীর মাথা ন্যাড়া করে দিয়ে ক্রুশ চিহ্ন আঁকার অভিযোগ উঠল।
এই অভিযোগের ফলে সার্বিয়া ও হাঙ্গেরির সীমান্তে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও অপমান নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে বলে মনে করছে অভিবাসন সংস্থা ও এনজিওগুলো।
অভিবাসীদের আইনি ও মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা প্রদানকারী সার্বীয় এনজিও ক্লিকএকটিভের কাছে গত সপ্তাহে সাক্ষ্য প্রদান করে এই ঘটনা তুলে ধরেন ভুক্তভোগী মরক্কোর নাগরিক।
AYS New Digest 6/09/2022:
1/3
Hungarian authorities shaved the heads of people on the move in the shape of a cross – border humiliations do not stop
People in distress in various parts of the Mediterranean left unrescued or illegally pushed-backhttps://t.co/mh7xgkRfK3— Are You Syrious? (@areyousyrious) September 8, 2022
পুলিশের হাতে আহত যুবক এনজিও কর্মীদের জানায়, অন্য অভিবাসীদের সাথে সার্বিয়া থেকে হাঙ্গেরি সীমান্তে প্রবেশের সময় হাঙ্গেরির পুলিশ তাকে ব্যাপক মারধর করেছে। এছাড়া সীমান্ত এজেন্টরা তাকে লাথি এবং কাঁটা দিয়ে পিটিয়েছে বলেও জানান তিনি।
অভিবাসীদের মারধরের এক পর্যায়ে সবার ব্যাগ তল্লাশি করতে শুরু করে হাঙ্গেরি পুলিশ। মরোক্কোর যুবক জানান, তার ব্যাগে একটি দাড়ি কামানোর বা শেভ করার ক্ষুর পাওয়া গেলে এক পুলিশ কর্মকর্তা সেটি দিয়ে তার মাথায় একটি খ্রিস্টীয় ক্রুশ চিহ্ন এঁকে দেন।
তিনি ক্লিকএকটিভকে আরও বলেন, “ক্রুশ চিহ্ন আঁকার পরে তারা জোরে হাসতে শুরু করে এবং আমার মাথায় লাথি মারতে শুরু করে৷”
তিনি তার এই বক্তব্যের সমর্থনে একটি ছবিও প্রদান করেন এনজিওকে।
তবে, অভিবাসীদের এভাবে অপমান করার বিষয়টি নতুন নয়। এর আগে ২০২০ সালেও ক্রোয়েশিয়া-বসনিয়া সীমান্তেও একই ঘটনা লক্ষ্য করা গেছে।
বেশ কয়েকটি সূত্রের মতে, সে সময় অন্তত ১৮ জন অভিবাসীর মাথায় কমলা রঙের স্প্রে দিয়ে মাথায় ক্রস দিয়েক্রুশ চিহ্ন এঁকে দিয়েছিল ক্রোয়েশিয়ার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা।
বাড়ছে সহিংসতা
সার্বীয়-হাঙ্গেরি সীমান্তে এনজিও ক্লিকএকটিভ উত্থাপিত নতুন এই অভিযোগ মূলত হাঙ্গেরি পুলিশের বিরুদ্ধে বছরের পর বছর ধরে চলা অভিযোগের সাথে আরও একটি নতুন অভিযোগ যোগ করেছে।
তবে অধিকার কর্মীরা বলছেন, এই সীমান্তে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সহিংসতা বেড়েছে।
সেপ্টেম্বরের শুরুতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ক্লিকএকটিভ জানায়, “সার্বিয়া থেকে হাঙ্গেরি প্রবেশ করতে চাওয়া লোকেরা নিয়মিত সীমান্তে রাবার বুলেটের আঘাতে আহত হন। পুলিশের গাড়ি দিয়ে অমানবিকভাবে ধাক্কা দিয়ে অভিবাসীদের বের করে দেওয়া হয়। অঙ্কে অভিবাসী পুলিশের অভিযান কাঁটাতারের বেড়ায় পড়ে যান। সেখান থেকে তাদের তুলে পা টেনে টেনে সীমান্ত বেড়ার অপর পাশে নিয়ে গিয়ে উলঙ্গ করে খালি পায়ে সার্বিয়ার দিকে ফিরে যেতে বাধ্য করা হয়।”
আগস্টে, ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) জানায়, সার্বিয়া এবং হাঙ্গেরির মধ্যে সীমান্ত অতিক্রমকারী অভিবাসীদের বিরুদ্ধে হাঙ্গেরীয় নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা সহিংসতার উদ্বেগজনক ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত এমএসএফ এই অঞ্চলে সহিংসতার শিকার ৪২৩ জন অভিবাসীকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে সহিংস ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষকে আশ্রয় আবেদন করা থেকে বিরত রাখতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে এই ফরাসি এনজিওটি।