ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হাজী মুহাম্মদ মুহসিন হলে বৈধ এক শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রুম থেকে বের করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হলের ৫৬২ নম্বর রুমে এই ঘটনা ঘটে।
এসময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তার সঙ্গে থাকা কয়েকজনকে মারধরও করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ভুক্তভোগী ই শিক্ষার্থীর নাম ফারহান সাইফুল। তিনি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
অভিযুক্তরা ছাত্রলীগ কর্মীরা হলেন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের তাওহীদুল ইসলাম, ম্যানেজম্যান্ট বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শরিফুল ইসলাম, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ১৮-১৯ সেশনের শাখাওয়াত ওভি, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি বিভাগের ১৮-১৯ সেশনের শেখ ইমরান ইসলাম ইমন, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ১৯-২০ সেশনের মুনতাসীর হোসেন, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মুহাম্মদ সামিন চৌধুরী সহ আরো অনেকে।
এরা সবাই হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেনের অনুসারী। আর মোহাম্মদ হোসেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী।
ভুক্তভোগী সাইফুল বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুরে আমায় হল থেকে এই রুমে সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়। তাই আমি বিকালের দিকে রুমে আসি এবং বিছানাপত্র নিয়ে সিটে উঠি। এসময় আমার সাথে আমার কয়েকজন বন্ধুও ছিলো। সন্ধ্যার দিকে অভিযুক্তরা আমার রুমে আসে এবং আমার পরিচয় জিজ্ঞেস করে। কিছু সময় পর হলের ছাত্রলীগের তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের কিছু কর্মী এসে আমায় বলে, হলের সিট কী প্রশাসন দেয়?, হলে কীভাবে উঠতে হয় তা জানস না? এসব বলে এবং আমি সহ আমার বন্ধুদের মারধর করে রুম থেকে বের করে দেয় এবং রুমটিতে তারা অবস্থান নেয়।’
এ বিষয়ে হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘ওই রুমে তিনমাস আগে আমাদের ছেলেরা উঠছিলো। এক বড় ভাই তাদের সিট দিয়ে গেছে। পরে রকি নামের এক বড় ভাই নাকি বহিরাগত ছাত্র তুলতে চাইছিলো তার কারণে ঝামেলা হইছিলো। এর বেশি কিছু আমি জানি না৷’
তবে শিক্ষার্থীরা জানান, এই রুমে এতোদিন পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থী অবস্থান করতেন। তিনি চলে যাওয়ার পরই হল থেকে রুম বরাদ্দ নিয়ে রুমে উঠেন সাইফুল।
পরবর্তীতে রাত পৌনো আটটা নাগাদ হলের আবাসিক শিক্ষক আইনুল ইসলাম ও মো. ইমাউল হক সরকার (টিটু) গিয়ে রুমটিকে আপাতত তালাবদ্ধ করে দেন।
এর আগে সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ হলের আবাসিক শিক্ষক আইনুল ইসলাম ও মো. ইমাউল হক সরকার (টিটু) ৫৬২ নম্বর রুমে গিয়ে দরজা খুলতে বললেও ছাত্রলীগ কর্মীরা দরজা খুলেনি৷ এসময় তারা শিক্ষক পরিচয় দিলেও ভেতরে থাকা ছাত্রলীগ কর্মীরা দরজা খুলেনি। এসময় শিক্ষকরা রুমে তালা দেওয়ার কথা বললে প্রায় ৪০ মিনিট পর ভেতরে থাকা ছাত্রলীগের কর্মীরা দরজা খুলে। পরে শিক্ষকরা অবৈধ ভাবে রুম দখল করা ছাত্রলীগের কর্মীদের বের করে দিয়ে রুমটি তালাবদ্ধ করে দেয়৷
এসয়ম রুমের ভেতরে ছাত্রলীগের ছয় জন কর্মী অবস্থান করছিলেন। তারা হলেন ইংলিশ ফর স্পিকার অফ আদার লেংগুয়েজের আরাফাত হোসেন মাহিন, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের এনামুল হক পলাশ, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি বিভাগের মারুফ, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শরীফুল ইসলাম, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের শিবলী সাদিক, ইসলামিক স্টাডিজের মুনতাসির হোসেন৷ এরা সকলেই ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী।
এবিষয়ে আবাসিক শিক্ষক ও কক্ষ বরাদ্দ বিষয়ক কমিটির আহবায়ক আইনুল ইসলাম বলেন, ‘নিঃসন্দেহে শিক্ষকদের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা একটি অপরাধ। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিকে জানানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিশ্চয় ব্যবস্থা নিবো।’
এবিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাসুদুর রহমান বলেন, ‘হল কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে রুমটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে রুমটি বৈধ শিক্ষার্থীর কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’
#ঢাকাটাইমস