মারুফা জাহান মাইশা। পাঁচ বছর বয়সী একটি শিশু। কুড়িগ্রামের এই শিশুটির ৯ মাস বয়সে পুড়ে যাওয়া আঙুলের অপারেশন করাতে অনেক আশা নিয়ে ঢাকা শহরে নিয়ে আসেন মাইশার বাবা-মা। আর এক পৈশাচিক ডাক্তারের কার্যক্রম দেখুন, আঙুল অপারেশনের নামে পেট কেটে সেই শিশুটিকে মেরে ফেলেছে।
কুড়িগ্রাম পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভেলাকোপা ব্যাপারী পাড়ার মোজাফফর আলী ও বেলি আক্তার দম্পতির মেয়ে মারুফা জাহান মাইশা। নানা ওসমান গণি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো নামে বেনামে বৈধ অবৈধ নানান চিকিৎসার নামে ক্লিনিক/হসপিটাল স্থাপন হয়েছে। সেখানকার সার্টিফিকেট বিহীন ডাক্তারদের অবস্থা দেখুন।
কুড়িগ্রামের ৫ বছরের ছোট্ট মেয়ে মাইশা। মাইশার বয়স যখন ৯ মাস তখন চুলার আগুনে পুড়ে যায় তার ডান হাতের আঙুল। ওই সময় রংপুরে চিকিৎসা করে হাতের ক্ষত ভালো হলেও কুঁকড়ে যায় মাইশার ডান হাতের তিন আঙুল।
কিছু দিন আগে রাজধানী ঢাকার মিরপুরে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের ডাক্তার মো. আহসান হাবীবের শরণাপন্ন হন মাইশার বাবা মোজাফফর। তিনি জানতে পারেন ভালো চিকিৎসা নিলেই মেয়ের হাত ভালো হবে। চিকিৎসকও বলেছেন, ‘অপারেশন করলে স্বাভাবিক হবে’।
চিকিৎসকের কথা অনুযায়ী গত বুধবার (৩০ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালে হাতের অপারেশন হয় মাইশার। অস্ত্রোপচারের ঘরে ঘণ্টা দেড়েক রাখার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘ মাইশার অবস্থা খারাপ। তাকে আইসিইউ সাপোর্ট দেয়ার জন্য গ্লোবাল স্পেশালাইজড হাসপাতালে নিতে হবে।
এই বিষয়ে মাইশার বাবা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মেয়ের হাতের আঙুল ঠিক করার জন্য ঢাকার মিরপুরে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের ডা. আহসান হাবীবের কাছে যাই। তিনি সবকিছু দেখে বলেন, বুধবার (৩০ নভেম্বর) সকালে অপারেশন করা হবে। রূপনগরে আলম মেমোরিয়াল মেডিক্যালে তার শেয়ার আছে জানিয়ে বলেন, সেখানে অপারেশন করালে খরচ কম লাগবে। বুধবার সেখানে হাতের অপারেশন করার সময় মেয়ে মারা যায়। পরে তারা আমাদের টাকা ফেরত দিয়ে ধমকিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। বাড়িতে এসে মেয়েকে গোসল করার সময় স্থানীয় মহিলারা দেখেন, মেয়ের তলপেটের পুরো অংশ সেলাই করা।’
দিনমজুর মোজাফফর বলেন, ‘আমরা এটা দেখে নিরুপায় হয়ে পড়ি। আমরা গরিব মানুষ। কিছু বুঝি না। হাত অপারেশন করাতে গিয়ে তারা কেন আমার মেয়ের পেট কাটলো তা জানি না। আমাদের কোনও কাগজপত্রও দেওয়া হয়নি।’
মাইশাকে গোসল করানো মফিজা খাতুন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মেয়ের হাতের আঙুল কাটা ছিল। পরে গোসলের সময় দেখতে পাই ওর নিচ পেটের পুরো অংশ কেটে সেলাই করা। পরে সবাইকে জানাই।’
মাইশার মা বেলি বলেন, ‘আমি কী ভুল করলাম! কেন মেয়েকে নিয়ে গেলাম। ওরা ডাক্তার না, কসাই। আমার মেয়ের পেট কাটলো কেন? ওরা আমার মেয়েকে মেরে ফেলছে। আমি এর বিচার চাই। আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর বিচার চাই।’
পরিবারের পক্ষ থেকে ডা. আহসান হাবীবের একটি ভিজিটিং কার্ড দেয়। ওই কার্ডের নম্বর ধরে কল করা হলে অপর প্রান্তের ব্যক্তি নিজেকে ডা. আহসান হাবীব বলে দাবি করেন। মাইশার অপারেশন ও মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি অপারেশন করিনি। আমার শেয়ার থাকা আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালে অপারেশন অ্যারেঞ্জ করে দিয়েছিলাম। সেখানে ঢাকা মেডিক্যালের প্লাস্টিক সার্জারির চিকিৎসক (সহকারী অধ্যাপক) ডা. শরিফুল ইসলাম অপারেশন করেন। কিন্তু দুর্ঘটনাবশত শিশুটি মারা যায়। আমি নিজেও এ ঘটনায় শক্ড (হতবাক)।’
এটা খুবই স্বাভাবিক যে, এই প্রশ্নের উত্তরের মাঝেই লুকিয়ে আছে বাকি অনেক কিছুর উত্তর। কে জানে এই পেট কাটার ব্যবসা তারা কতদিন ধরে করে আসছেন? পেট কেটে সেলাই করে দিলেই কি বিচারের দাবিকে ভেতরে ফেলে রাখা যাবে? উন্মুক্ত হোক মাইশার পেট কাটার রহস্য। আর উপযুক্ত শাস্তির নিশ্চয়তাই পারে আগামীর স্বাস্থ্যখাতকে সুপথে ফিরিয়ে আনতে।
জেনেবুঝে হত্যার কোনো রক্ষা হওয়া উচিত নয়। শিশুটির পরিবার ইতিমধ্যে দাবি করেছে, সংশ্লিষ্টদের উপযুক্ত বিচারের। কেন মাইশার পেট কাটা হলো এর উত্তর তাদের চাই।
বলি বাংলাদেশে কি এদের বিরুদ্ধে বিচার আদৌ পাবে শিশুটির বাবা? মাইশার পেট কাটার রহস্য উন্মোচিত হউক। আর এসব কসাইদের উপযুক্ত শাস্তির নিশ্চয়তাই পারে আগামীর স্বাস্থ্যখাতকে আস্থার জায়গায় ফিরিয়ে আনতে।
আনোয়ার-ই-তাসলিমা
চেয়ারম্যান; সৃষ্টি হিউম্যান রাইটস সোসাইটি