মণিপুরে দুই তরুণীকে ধর্ষণের পর সবার সামনে বিবস্ত্র অবস্থায় হাঁটতে বাধ্য করে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় পুরো ভারত জুড়ে তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিবস্ত্র করে হাঁটানো ওই দুই তরুণীর এক জনের মা এনডিটিভিকে সাক্ষাতকার দিয়েছেন। এতে তিনি বলেছেন, এ ঘটনার জন্য সরকার দায়ী। আমাদের আর গ্রামে ফিরে যাওয়া সম্ভব না।
গত ৩ মে থেকে মণিপুরে জাতিগত হিংসা শুরু হয়। সেই রেশ চলছে এখনও। রাজ্য জুড়ে হিংসায় কুকি এবং মেইতেই সম্প্রদায়ের ১৫০ জনরে মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন বহু মানুষ।
হিংসায় পুড়ে যাওয়া মণিপুরের কঙ্গপকপি জেলার একটি গ্রামে দুই নারীকে বিবস্ত্র করে হাঁটানো হয়। শ্লীলতাহানি করা হয়। গ্রামছাড়া হয়ে দল বেঁধে আশ্রয়ের খোঁজে যাচ্ছিলেন তারা। তখনই এই আক্রমণ হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই ঘটনার ছবি, ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পুলিশ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। দুই নির্যাতিতার মধ্যে এক জনের মা সংবাদমাধ্যমকে জানান, তিনি ওই ঘটনার পর থেকে অসুস্থ। মানসিক ভাবেভাল নেই।
তার অভিযোগ, শুধু মেয়ের শ্লীলতাহানিই নয়, তার স্বামী ও ছেলে প্রাণ হারিয়েছেন এই হিংসায়। তিনি বলেন, ‘‘উন্মত্ত জনতার হাতে আমার মেয়ে লাঞ্ছিত হওয়ার আগে ছেলে ও স্বামীকে খুন হতে হয়েছে। কুকি এবং মেইতেই সংঘর্ষের ভয়াবহতার কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে আসে তার।
তিনি বলেন, আমার ছোট ছেলেকে হারিয়েছি, ও ছিল আমার আশাভরসার জায়গা। দ্বাদশ শ্রেণির পড়াশোনা শেষ করার পর ওকে ভাল জায়গায় পড়ানোর কথা ভেবেছিলাম। কষ্ট হলেও সেটা করতাম। আমার স্বামীকেও হারালাম। বড় ছেলের হাতে কোনো কাজ নেই। তাই পরিবারের কথা যখন ভাবি, আমি কোনো আশার আলো দেখি না। আমার আর কিছু নেই।
হিংসার ঘটনা নিয়ে ওই নারী এনডিটিভিকে বলেন, আমাদের গ্রামে ফেরার আর কোনো আশা নেই। ফেরার কথা আর চিন্তাও করি না… না, আমরা আর গ্রামে যাব না। আমি নিজে আর ফিরতে চাই না।’’
এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার নথিতে বলা হয়েছে, উত্তেজিত জনতা সমস্ত বাড়িঘর ভাঙচুর করে এবং আগুন লাগিয়ে দেয়। বাড়িঘর থেকে নগদ টাকা, আসবাবপত্র, ইলেক্ট্রনিক পণ্য, খাদ্যশস্য এবং গবাদি পশু লুট করে নিয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, ১৯ জুলাই ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে যাদের দেখা যায় তাদের মধ্যে চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরের দিন গ্রেপ্তার করা হয় তাদের।