বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, যদি শেখ হাসিনার পতন না হত, শেখ হাসিনা যদি ক্ষমতায় থেকে যেতেন আমাদের প্রত্যেকের ফাঁসি দিয়ে দিতেন। কারণ, এই মহিলার তো কোনো কাণ্ডজ্ঞান নেই। সিংহাসন রক্ষা করার জন্য কে বাঁচল, কে মরল তিনি তা গ্রাহ্য করেননি।
শনিবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে কুমিল্লা মেঘনা উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘‘যে মহিলা ক্ষমতায় থাকার জন্য পাঁচ বছরের শিশু আহাদকে হত্যা করতে পারে, যে মহিলা গাজীপুরের চৌদ্দ বছরের এক শিশুর গায়ে চল্লিশটি গুলি করতে পারে, সেই মহিলা টিকে থাকলে তো আমাদের বাঁচিয়ে রাখার কথা নয়, আমাদেরকেও ফাঁসি দিয়ে দিতেন।’’
তিনি বলেন, ‘শিশু বাচ্চাসহ তাদের অভিভাবকরা যখন রাস্তায় নেমে এসে অকাতরে জীবন দিয়েছে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু সাঈদ শার্টের বোতাম খুলে যখন পুলিশের গুলি বরণ করে নিয়েছে তখন সারাদেশের মানুষের রক্তের লৌহ কণিকা, শ্বেত কণিকা জেগে উঠেছে। ওই মাসুম বাচ্চারা ঝাঁপিয়ে পড়ার কারণেই আজকে আমরা মুক্তভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারছি, কিছুটা স্বস্তিতে জীবন যাপন করতে পারছি। গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালাতে পারছি।’’
রিজভী বলেন, ‘‘এখন আমাদেরকে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং চর্চা করার জন্য অনেক কাজ করতে হবে। গড়িমসি করে গণতন্ত্রের মূল কাজগুলো বন্ধ রাখা চলবে না। এদেশের মানুষ বিগত ১৬-১৭ বছর ভোট দিতে পারেনি— এটা গোটা বিশ্ব জানে। কারণ, একটা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে দেশের মানুষ জানে কাকে ভোট দিতে হয়। সেই কারণে জনগণের প্রতি সন্দেহ পোষণ করে শেখ হাসিনা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন দেননি। তিনি দিনের ভোট রাতে করেছেন এবং ভোটারদেরকে ভয় দেখানোর জন্য মাইকিং করেছেন বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে। তারা বলেছেন- আপনারা ভোট কেন্দ্রে যাবেন না।’’
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা আমরা শেখ হাসিনার সময় দেখেছি। জনগণ ভোট দিতে পারেনি। তাদের ক্ষমতা শেখ হাসিনা কেড়ে নিয়েছিলেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে। তিনি মনে করতেন, এই জনগণই তার শত্রু পক্ষ। সে কারণেই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারকে সমস্ত গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল সমর্থন দিয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করি এই সরকার জনগণের ক্ষমতা আগে জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।’’
রিজভী বলেন, ‘‘জনগণের কাছে জনগণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করার দায়িত্ব হচ্ছে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের প্রধান দায়িত্ব। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করার কারণটা কি আমি জানি না। এই কথাগুলো সামনে আসছে। এই ধরনের নাকি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমি আগেও বলেছি- আপনারা কি তাহলে রাজনৈতিক দল— যারা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছে, যাদেরকে দমন পীড়ন করেছে শেখ হাসিনা, তাদের প্রতি কি আপনাদের বিশ্বাস নেই?’’
কাউন্সিলে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া, মোস্তাক আহমেদ, আকতার হোসেন, তারেক মুন্সি, ডা. জাহিদুল কবির, কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ, আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডা. তৌহিদুর রহমান আউয়াল প্রমুখ।