ads
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১১:৩৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম
প্রেস ক্লাবের সামনে আন্দোলনকারীদের ওপর জলকামান-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নবীন কর্মকর্তাদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান সেনাপ্রধানের স্বৈরাচারের দোসর আরও ৩৯ আমলার দ্রুত অপসারণ দাবি জুলাই ঐক্যের ধর্ষণের পর গর্ভপাত: সালিশে ব্যর্থ, মামলাও নেয়নি পুলিশ হামলা ঠেকাতে ইসরায়েলের ব্যয় দিনে ২০০ মিলিয়ন ডলার ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলা বিপজ্জনক নজির: জাতিসংঘে চীনা দূত বেদখল খাসজমি উদ্ধারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ভূমি উপদেষ্টার বান্দরবানের লামায় সেনাবাহিনীর অভিযান, ৯ সন্ত্রাসী আটক দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে ট্রেনে কাটা পড়ে নারীর মৃত্যু শ্রীবরদীতে মাছের ঘেরে ২ শিশুর মরদেহ, দুর্ঘটনা নাকি হত্যাকাণ্ড!

যে জন্য আত্মহত্যা করেন চিকিৎসক সুলতানা

রিপোর্টারের নাম
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১৮ আগস্ট, ২০২০
  • ৪২ বার পঠিত

জামালপুরের মেলান্দহ হাসপাতালের করিডোরে প্রাণখোলা হাসিমুখে ঘুরে বেড়াতেন ডা. সুলতানা পারভীন। গাইনী বিভাগের এই সার্জন ছিলেন সবার প্রিয় ‘ডাক্তার আপা’। এই হাসপাতালে দেড় বছর চাকরি করেই রোগী, রোগীর স্বজন, ডাক্তার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মন জয় করে নিয়েছিলেন কাজের দক্ষতা ও ব্যবহারে। হাসপাতালে রোগী ও স্বজনদের সাথে শিশুরা এলে তাদের সাথেও ভাব জমাতেন খুব সহজেই। সবার মুখে একই কথা, তিনি খুব প্রাণচঞ্চল ও প্রাণবন্ত মানুষ ছিলেন।

অথচ হতাশাগ্রস্ততা থেকেই তিনি বেছে নিলেন আত্মহত্যার পথ। এটা যেন মানতেই পারছেন না তার সহকর্মী ও হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সবাই অবাক হয়েছেন প্যাথেডিন পুশ করা অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার নিয়ে। এর আগে কেউ না পেয়েছেন তার মাদকাসক্ততার কোনো লক্ষণ, না পেয়েছেন ব্যক্তিগত দুঃখবোধের পরিচয়।

প্রেমিক স্বামী বুয়েটের ছাত্র সাব্বিরের সাথে তার বিয়ে হয়। সাব্বিরের বাড়ি খুলনা জেলায়। বিয়ের পর তাদের মধ্যে দেখা দেয় দাম্পত্য কলহ। কলহ থাকা অবস্থাতেই সাব্বির কানাডা চলে যান। সেখান থেকেই প্রায় ৪ বছর আগে সাব্বির ডা. সুলতানা পারভীনকে তালাক দেন।

সম্প্রতি দেশে ফিরে সাব্বির ফের বিয়ে করেন। তার বিয়ের খবর মেনে নিতে পারেননি সুলতানা পারভীন। ৫টি প্যাথেডিন শরীরে পুশ করে আত্মহত্যা করলেন এই মেধাবী ডাক্তার। এমনই তথ্য পাওয়া গেছে হাসপাতালের ডাক্তার-কর্মকর্তা-কর্মচারী ও উপজেলা পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা বলে।

আরও জানা গেছে, হাসপাতাল কোয়ার্টারে তার কক্ষের দরজা ভেঙে লাশ উদ্ধারের সময় পাওয়া গেছে একটি চিঠি ও ডায়েরি। ডায়েরিতে সাব্বিরের সাথে প্রেম, বিয়ে, কলহ ও বিচ্ছেদ নিয়ে অনেক কথা লেখা আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ডা. সুলতানা পারভীনের দাদাবাড়ি চট্টগ্রামের সন্দীপ থানার বাউনিয়া এলাকায়। তার বাবা আলাউদ্দিন আজাদ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, পেশায় ছিলেন রেল পুলিশের ইন্সপেক্টর। চাকরির সুবাদে বাবা রাজশাহী জেলা সদরের পোস্টাল একাডেমি গলি এলাকায় স্থায়ী নিবাস গড়লে সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। এইসএসসি পর্যন্ত রাজশাহীতেই তার লেখাপড়া। উচ্চ মাধ্যমিকের পর মেধা তালিকায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে রংপুর মেডিকেলে লেখাপড়া করেন তিনি। চার বোনের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবার বড়। বর্তমানে তার মা-বাবা ও বোনেরা ঢাকার মোহাম্মদপুরে থাকেন।

মেলান্দহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর যোগদান করার আগে ডা. সুলতানা পারভীন মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। এখানে যোগদান করার পর একাই থাকতেন হাসপাতাল কোয়ার্টারে। মাঝেমধ্যে তার মা এসে থাকতেন।

মেলান্দহ হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ ব্রাদার মো. আতাউর রহমান ডা. সুলতানা পারভীনের সাথে অপারেশন থিয়েটারে কাজ করতেন। তিনি জানান, তার মুখে কখনো বিষন্নতার ছায়া দেখা যায়নি। তিনি ছিলেন সুদক্ষ চৌকষ ডাক্তার। তার চিকিৎসায় এ পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তার ভেতরে মাদকাসক্তের লক্ষণও কোনদিন টের পাইনি। তিনি ছিলেন প্রাণচঞ্চল ও প্রাণবন্ত মানুষ। এমন মানুষ এভাবে আত্মহত্যা করবেন কল্পনাও করা যায় না।

আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. নাজমুল হাসান নবীন জানান, মেন্টাল ডিপ্রেশন থেকেই আত্মহত্যা করেছেন বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারনা করছি। তিনি ডিপ্রেশনে ছিলেন আমরা কখনো বুঝতে পারিনি। ৫টি প্যাথেডিনের এ্যাম্পলসহ তার লাশ উদ্ধারে আমরা অবাক হয়েছি। কারণ আমার কখনো মনে হয়নি তিনি প্যাথেডিন নিতে পারেন।

শনিবার (১৫ আগস্ট) জামালপুর শহরের শাহজামাল হাসপাতালে রোগী দেখে রাতে ডা. সুলতানা পারভীন কোয়ার্টারে ফেরেন। রোববার (১৬ আগস্ট) সকালে আয়া ঘর পরিস্কার করতে গিয়ে তার কক্ষ ভেতর থেকে বন্ধ পান। বিকাল ৩টার সময় শাহজামাল হাসপাতালে তার রোগী দেখার কথা ছিল। ওই হাসপাতাল থেকে গাড়ি যায় তাকে আনতে। ড্রাইভার দরজায় নক করে অনেক ডাকাডাকির পরও শব্দ না পেয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফজলুল হককে বিষয়টি জানান।

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তার পিয়ন পাঠিয়ে দেন ডাক্তার সুলতানা পারভীনকে ডাকতে। পিয়নও ডাকাককির পর দরজা না খোলায় ফিরে এসে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে জানান। তার সন্দেহ হলে মেলান্দহ থানায় বিষয়টি অবহিত করেন।

বিকেল ৫টার দিকে পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে ডা. সুলতানা পারভীনের লাশ উদ্ধার করেন। রাতেই স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফজলুল হক বাদী হয়ে মেলান্দহ থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছেন বলে জানিয়েছেন ওসি রেজাউল করিম খান।

পুলিশ নিহত সুলতানা পারভীনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। আজ সোমবার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহত সুলতানা পারভীনের লাশ নিয়ে আজ বিকেলে পরিবার রাজশাহীর দিকে রওনা হয়েছে।

মেলান্দহ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. ফজলুল হক জানিয়েছেন, স্বনামধন্য এই ডাক্তারের মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। এ মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটনে আইনি তদন্ত চলছে।

সহকারী পুলিশ সুপার সীমা রানী বিশ্বাস এ প্রসঙ্গে বলেন, ডাক্তার সুলতানা পারভীনের মৃত্যু নিয়ে নানা দিক বিচার বিশ্লেষণ করে গভীরভাবে তদন্ত হচ্ছে। আমাদের প্রাথমিক ধারণা হতাশাগ্রস্থতা থেকেই আত্মহত্যা করেছেন তিনি। ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। পুলিশি তদন্ত ও ময়নাতদন্তের রির্পোটের পর আত্মহত্যার কারণ বলা যাবে।

সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
ইঞ্জিনিয়ার মোঃ ওয়ালি উল্লাহ
নির্বাহী সম্পাদক
নিউজ রুম :০২-৯০৩১৬৯৮
মোবাইল: 01727535354, 01758-353660
ই-মেইল: editor@sristybarta.com
© Copyright 2023 - SristyBarta.com
Develop By : BDiTZone.com
themesba-lates1749691102