দুই আর পাঁচ ইঞ্চি সাইজের দুইটি কাঠের টুকরা ভেতরে রেখেই সেলাই দিয়েছেন মাদারীপুর সদর হাসপাতালের এক নার্স। শুধু তাই নয়, এক হাজার টাকা ঘুষের বিনিময়ে তাড়াহুড়া করে সেলাই দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন মাদারীপুর সদরের হোগলপাতিয়া এলাকার আলম সর্দারের শিশুপুত্র রাকিব সর্দারকে। এরপর শুরু হয় যন্ত্রণা। এভাবে দুই মাস অসহনীয় যন্ত্রণা ভোগ করে অবশেষে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ-হাসপাতালে দুই দফা অস্ত্রপাচারের পর যন্ত্রণা থেকে মুক্ত মেলে। তবে এরই মধ্যে অসহায় পরিবারের শিশুটির হাত বাঁকা হয়ে যায়। তাই দোষীদের উপযুক্ত বিচার আর ক্ষতিপূরণ চেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আলম সর্দার।
ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, গত ১৫ মে দুপুরে ঘরের মাচা থেকে পা পিছলে পড়ে যায় মাদারীপুর সদরের আলাম সর্দারের ১২ বছরের সন্তান রাকিব সর্দার। এসময় গাছের কাঠের টুকরা হাতের ভেতর ঢুকে যায়। এরপর রক্তাক্ত অবস্থায় ছুটে আসে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। তাৎক্ষণিক কোন চিকিৎসক না পেয়ে অস্থির হয়ে ওঠেন দিনমজুর আলম সর্দার। তখন চিকিৎসার জন্য দুই হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন জরুরি বিভাগের নার্স (ব্রার্দার) মো. তোতা মিয়া। উপায় না পেয়ে এক হাজার টাকা দিয়ে অনুরোধ করলে ওই নার্সসহ আরো দুইজন মিলে তাড়াহুড়া করে রাকিবের ক্ষতস্থান সেলাই করে দেন। এরপর কিছু ওষুধ লিখে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। কিন্তু বাড়িতে পাওয়ার পর শুরু হয় তীব্র যন্ত্রণা। এরপর থেকে প্রায়ই আসেন ড্রেসিং করাতে। কিন্তু ব্যথা কমার কোন লক্ষণ না দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্ত সেখানেও উন্নত চিকিৎসা না পেয়ে ফরিদপুরে ‘রয়েল হাসপাতাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়গনিস্ট সেন্টারের’ চিকিৎসক আবু সালেহ আহমেদ সৌরভের শরনাপন্ন হলে তিনি রাকিবের অপারেশন করে হাত থেকে দুই টুকরো কাঠ বের করেন। যা প্রায় পাঁচ ইঞ্চি ও দুই ইঞ্চি হবে।
আলাম সর্দার বলেন, সরকার কোটি কোটি টাকা দেয় আমাদের মতো গরিবদের চিকিৎসার জন্যে। কিন্তু এখানে চিকিৎসকরা কসাইয়ের মতো ব্যবহার করে। তাদের ভুল চিকিৎসায় আমার ছেলের জন্য প্রায় তিন লাখ টাকা ব্যয় হলো। বিষয়টি নার্স মো. তোতা মিয়াকে জানালে আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন তিনি। আমরা দোষি ব্যক্তির শাস্তি চাই। সেই সঙ্গে ভুল চিকিৎসার জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণের দাবি করছি।’
ভুক্তভোগি শিশু রাকিব সর্দার বলে, ‘আমার হাতে এখনো খুব ব্যথা করে। রাতে ঘুমাতে পারি না। হাতও বাঁকা হয়ে আছে। আমরা অসহায় দেখে ডাক্তাররা ভুল চিকিৎসা করেছে। আমি তাদের বিচার চাই। যেন আগামীতে এমন কাজ কারো সঙ্গে না করতে পারে।’
অভিযুক্ত মো. তোতা মিয়া বলেন, ‘আমার সেদিন করোনার ডিউটি ছিল। সেখান থেকে জরুরি বিভাগে এসে দেখি শিশুটা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। তখন তাদের থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে সুতা কিনে সেলাই করে দিয়েছি। হাতের ভেতর কিছু ছিল কিনা সেটা বুঝতে পারেনি। আমি ভালো করতে গিয়ে এখন দোষি হচ্ছি। এভাবে আর কারো উপকার করবো না। আমার ভুল হয়েছে।’
বিষয়টি জানাজানি হলে টনক নড়ে স্বাস্থ্য বিভাগের। জেলার সিভিল সার্জন মো সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শিশুটির বাবা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা তা যাচাই-বাচাই করে দেখবো। এর জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তারা যদি সদর হাসপাতালের কারো দোষ পায়, তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এছাড়া এই কাজটিও জঘন্য হয়েছে, আমি ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি খোঁজখবর নেব।’
ঘটনার দিন জরুরি বিভাগে কোন চিকিৎসক দায়িত্বে ছিলেন, তাৎক্ষণিভাবে সেটি সিভিল সার্জন জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, সেদিন যিনি দায়িত্বে ছিলেন, তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।