আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি নিয়ে হাইকোর্টে এসেছেন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর।
আজ রোববার (০৪ অক্টোবর) সকালে রায়ের কপি নিয়ে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্নার সাথে দেখা করেছেন । তবে এ বিষয়ে মিন্নির বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে বরগুনা আদালতে দায়িত্বে থাকা মিন্নির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, শনিবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে মিন্নির বাবা রায়ের কপি হাতে পেয়েছেন। কপি পাওয়ার পরপরই তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে বরগুনা ছেড়েছেন।
আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয়জনের ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুর পৌনে ২টার দিকে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মো. রাকিবুল হাসান ওরফে রিফাত ফরাজী (২৩), আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রেজোয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মো. হাসান (১৯) ও আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯)। একই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আদালত।
আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির কারণে হতভাগা রিফাত শরীফ নির্মমভাবে খুন হয়েছেন এবং তার বাবা-মা পুত্রহারা হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন আদালত। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির রায়ের পর্যবেক্ষণে এমন মন্তব্য করেছেন বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালত।
শনিবার (০৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রিফাত হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। ৪২৯ পৃষ্ঠার রায়ের কপি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত উল্লেখ করেছেন, আসামি রিফাত ফরাজী, রাব্বি আকন, সিফাত, টিকটক হৃদয়, মো. হাসান এবং মিন্নি পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে রিফাত শরীফকে হত্যা করেছেন। এটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
তাই ৩০২ ধারায় মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং তৎসহ অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। ৩৪ ধারা মূলত স্বতন্ত্রভাবে শাস্তির বিধান আরোপকারী কোনো ধারা নয়। এ ধারা অপরাধের মূল শাস্তি আরোপকারী অন্যান্য ধারার পরিপূরক।
এতে বলা হয়েছে, কতিপয় ব্যক্তি মিলে তাদের অভিন্ন উদ্দেশ্যে বাস্তবায়নের জন্য কোনো কাজ করলে সেই অপরাধের জন্য তাদের প্রত্যেকে, সে একা ওই কাজ করলে যেভাবে দায়ী হবে, ঠিক তেমনি সবাই একইভাবে দায়ী হবে। তাই এই আইন অনুসারে এ মামলার ভিকটিম রিফাত শরীফকে খুন করার দায়ে আসামিরা সমানভাবে দায়ী।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও উল্লেখ করা হয়, এ মামলার আসামি মিন্নি এই ঘটনার পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা এবং তার কারণে হতভাগা রিফাত শরীফ নির্মমভাবে খুন হয়েছেন; এর মধ্য দিয়ে রিফাতের বাবা-মা পুত্রহারা হয়েছেন। তাই মিন্নির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে তাকে অনুসরণ করে তার মতো মেয়েদের বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। তাই মিন্নির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া বাঞ্ছনীয়।
আদালত আরও বলেন, প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে এই হত্যাকাণ্ড মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবাই এই হত্যাকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেছেন। তাই তাদের উপযুক্ত শাস্তি না হলে দেশের যুবসমাজ ভুলপথে অগ্রসর হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া বাঞ্ছনীয়।
২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে শত শত লোকের ভিড়ে রিফাত শরীফকে (২৫) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ঘটনার পরদিন ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও পাঁচ-ছয়জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন নিহত রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দু’ভাগে বিভক্ত করে ২৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এতে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।