ভারতের দক্ষিণী সিনেমার সুপারস্টার ইলিয়েনা ডি’ক্রুজ। তিনি বলিউডেও কাজ করেন। ইলিয়েনা যে কেবল ভালো অভিনয় করেন তা কিন্তু নয়, পাশাপাশি তার রয়েছে তারুণ্যভরা সৌন্দর্য। আর এই দুই দিয়েই তিনি জয় করেছেন ভক্তদের হৃদয়। এই দুই গুণ ছাড়াও ইলিয়েনা দারুণ সাহসী। যৌনতা নিয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে বরাবরই তিনি স্পষ্টবাদী।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, যৌনতা তার কাছে রিল্যাক্সেশনের অন্যতম মাধ্যম। যৌনতাই তার তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।
১৯৮৭ সালের ১ নভেম্বর ভারতের মুম্বাইয়ে জন্ম ইলিয়েনার। বাবা ছিলেন আইনজীবী। মা চাকরি করতেন হোটেলের রিলেশনশিপ ম্যানেজার হিসেবে। জন্মের পর প্রথম ১০ বছর মুম্বাইয়ে ছিলেন ইলিয়েনা। তারপর বাবা মায়ের সঙ্গে চলে যান গোয়ায়।
মা গোয়ার যে হোটেল কাজ করতেন, সেখানে প্রায়ই যেতেন ইলিয়েনা। একবার হোটেলের ম্যানেজার কিশোরী ইলিয়েনাকে প্রস্তাব দেন মডেলিং শুরু করার। কিন্তু প্রথমে সেই প্রস্তাবে গুরুত্ব দেননি ইলিয়েনা। কয়েকদিন পর হোটেলেই মার্ক রবিনসনের সঙ্গে ইলিয়েনার পরিচয় করিয়ে দেন ওই ম্যানেজার। এর পর রবিনসনের সঙ্গে কথা বলে ধীরে ধীরে মডেলিংয়ে আগ্রহ তৈরি হয় তার।
এরপর দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় মডেলিং শুরু করেন ইলিয়েনা। নিজের একটি পোর্টফোলিও তৈরি করে আবার মার্ক রবিনসনের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। কিন্তু সেই পোর্টফোলিও বাতিল করে দেন মার্ক রবিনসন। কারণ বাস্তবের ইলিয়েনা ছবির ইলিয়েনার মতো সুন্দরী নন!
পরে পেশাদার একজনকে দিয়ে পোর্টফোলিও তৈরি করান ইলিয়েনা। তারপর কাজ পেতে আর কোনো সমস্যাই হয়নি। গোয়া থেকে চলে যান মুম্বাই। বিজ্ঞাপনে কাজ পেতে থাকেন। একটি বিজ্ঞাপনে কাজ করেন রাকেশ রোশনের সঙ্গেও। সেই সূত্রে পরিচয় হয় বেশ কয়েকজন পরিচালক ও প্রযোজকের সঙ্গে। কিন্তু অনেক দূর এগিয়েও হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের ইচ্ছা অধরা ছিল তার।
মডেলিংয়ের পাশাপাশি অভিনয়ের একটা কোর্স করেন ইলিয়েনা। ২০০৬ সালে সুযোগ পান দক্ষিণী ছবিতে অভিনয়ের। তেলুগু ইন্ডাস্ট্রিতে মু্ক্তি পায় তার প্রথম ছবি ‘দেবদাসু’।
ছবিটি বক্সঅফিসে বেশ সফল। প্রশংসিত হয় ইলিয়েনার অভিনয়ও। প্রথম ছবি সুপারহিট হওয়ার ফলে তার আর সুযোগের অভাব হয়নি। একের পর এক ছবির অফার পেতে থাকেন। একসঙ্গে তিন-চারটি ছবিতেও অভিনয় করেছেন একসময়।
ইলিয়েনা অভিনীত তেলুগু ছবি ‘পোকিরি’র হিন্দি সংস্করণ ছিল ‘ওয়ান্টেড’। ছবিতে সালমান খানের বিপরীতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন ইলিয়েনা। কিন্তু তিনি রাজি হননি। কারণ একই বিষয়ে একাধিক ভাষায় অভিনয় না করার সিদ্ধান্ত ছিল তার। তাছাড়া সে সময় তার পরীক্ষাও ছিল।
এরপর ‘কিক’ ছবিতেও সালমান খানের বিপরীতে অভিনয়ের সুযোগ তিনি ফিরিয়ে দেন। দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে সুপারস্টার হওয়ার পর তিনি সালমানের বিপরীতে কাজ করতে চাননি। কারণ তার মনে হয়েছিল, এর ফলে প্রচারের সব আলো কেড়ে নেবেন সালমানই। তার নিজের কোনো সুবিধা হবে না।
তবে বলিউডেই ‘বরফি’ ছবিতে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন ইলিয়েনা। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, রণবীর কাপুরের মতো তারকার সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেন তিনি। এই ছবিতে তিনি বাঙালি তরুণীর চরিত্রে অভিনয় করেন। ছোট পরিসরে বড় তারকাদের পাশেও তিনি প্রচারের আলো নিজের ওপর টানতে সক্ষম হন।
বলিউডে পরপর বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। ‘ফাটা পোস্টার নিকলা হিরো’, ‘ম্যায়ঁ তেরা হিরো’, ‘হ্যাপি এন্ডিং’, ‘রুস্তম’সহ বেশ কিছু ছবিতে কাজ করেন ইলিয়েনা। ২০১৭ সালে মুক্তি পায় তার ‘বাদশা’। এই ছবিতে গানের দৃশ্যে তিনি অভিনয় করেন অজয় দেবগণের সঙ্গে।
তবে সাফল্য সত্ত্বেও বেশি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেননি ইলিয়েনা। কারণ বেছে বেছে কাজ করতেই ভালোবাসেন। এ বছর তাকে দেখা যাবে দু’টি হিন্দি ছবিতে। ‘দ্য বিগ বুল’ ছবিতে তিনি অভিনয় করছেন অভিষেক বচ্চনের বিপরীতে। রণদীপ হুদার সঙ্গে কাজ করবেন ‘আনফেয়ার লাভলি’ ছবিতে।
অস্ট্রেলীয় ফোটোগ্রাফার অ্যান্ড্রু নিবোনের সঙ্গে দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক ছিল ইলিয়েনার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অ্যান্ড্রুকে নিজের স্বামী বলেও পরিচয় দিতেন ইলিয়েনা। ভক্তরা ভেবেছিলেন, তাদের গোপনে বিয়ে হয়েছে। তবে ২০১৯ সালে শোনা যায় তাদের বিচ্ছেদের খবর।
অ্যান্ড্রু বিবাহিত এবং তিন সন্তানের বাবা। সব জেনেও ইলিয়েনা এই সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়। বিচ্ছেদের পরে ইলিয়েনা গভীর অবসাদের শিকার হন। মানসিক অবস্থা স্বাভাবিক করতে চিকিৎসকেরও কাছেও যেতে হয় তাকে। চিকিৎসা নিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন ইলিয়েনা।