বৈশ্বিক মহামারি করোনা তাণ্ডবে ধুকছে ব্রিটেন। এর মধ্যেই ভাইরাসটির নতুন বৈশিষ্ট্য ভয়াবহ সংকটে ফেলছে দেশটিকে। যাতে মৃত্যু ঝুঁকি অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) গণমাধ্যমকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, ‘যুক্তরাজ্যে যে দুটি টিকা প্রয়োগের কাজ চলছে, তা করোনার এই নতুন স্ট্রেইনকে ঘায়েল করতে সক্ষম। আমাদের বলা হয়েছে করোনার এই নতুন স্ট্রেইন যেমন দ্রুত সংক্রমণ ছড়ায়, তেমনই এতে মৃত্যুর হারও বেশি।’
তিনি বলেন, ‘নতুন এই স্ট্রেইন অনেক বেশি সংক্রামক হলেও পুরনো বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইসের মতো এটাকেও কাবু করার সক্ষমতা টিকার রয়েছে।’
এদিকে করোনার তাণ্ডব থামাতে ব্রিটেনজুড়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ চললেও এখন পর্যন্ত মিলেনি সুখবর। গত একদিনে ৪০ হাজার ২৬১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এতে করে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ লাখ ৮৩ হাজার ৯০৭ জনে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে প্রাণহানি ঘটেছে ১ হাজার ৪০১ জনের। ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯৫ হাজার ৯৮১ জনে ঠেকেছে।
অন্যদিকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে করোনামুক্ত হয়েছেন ১৬ লাখ ৬২২ জন রোগী। এর মধ্যে গত একদিনের বেঁচে ফিরেছেন ১৩ হাজার ৯১৫ জন।
এদিকে, আশঙ্কাজনকহারে ছড়িয়ে পড়ায় ভাইরাসটি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যাচ্ছে। এতে করে হাসপাতালগুলোতে রোগীদের উপচে পড়া ভিড় লেগেই আছে। এমতাবস্থায় লন্ডনে জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে। গত ৮ জানুয়ারি লন্ডনের মেয়র সাদিক খান এ ঘোষণা দেন। এ সময়ে জনসাধারণকে ঘরে থাকার অনুরোধ জানান তিনি।
সাদিক খান বলেন, ‘যেভাবে করোনা বিস্তার লাভ করেছে, তা দিনদিন নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যাচ্ছে। এতে করে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে হাসপাতালগুলোর শয্যা শেষ হয়ে যাবে। আমরা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছি। কারণ, আমাদের শহরে হুমকি হয়ে ওঠা ভাইরাসটির প্রকোপ সংকটময় মুহূর্তে পৌঁছে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘লন্ডনের কিছু কিছু জায়গায় প্রতি ২০ জনে একজনের শরীরে করোনা সংক্রমিত হচ্ছে। যা খুবই উদ্বেগের। অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসেও বেড়ে গেছে চাপ। দিনে আসছে ৯ হাজারের বেশি কল।’
দেশটিতে ক্রমাগত ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে করোনার নতুন স্ট্রেইন। টিকা প্রয়োগ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত তার সুফল তেমনটা মিলেনি বলেই জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। ফলে পরিস্থিতি আরও সংকটের দিকে পৌঁছাচ্ছে, হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।
করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন থেকে ঝুঁকি এড়াতে ১৮ জানুয়ারি (সোমবার) থেকে সব ধরনের ভ্রমণ পথ বন্ধ করেছে যুক্তরাজ্য। যা আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এর মধ্যে কেউ যদি দেশটিতে প্রবেশ করতে চায় তাহলে তাকে কোভিড পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ দেখাতে হবে।
ব্রাজিলের করোনাভাইরাসের আলাদা এবং অজ্ঞাত এক ধরন শনাক্ত হলে উদ্বেগ তৈরি হয় যুক্তরাজ্যে। এর ফলে দক্ষিণ আমেরিকা এবং পর্তুগালের সাথে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেশটি। বলা হয়েছে যে, এরপরও যারা যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করবে তাদের ১০ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।