দারুণ জয়ে শীর্ষে মাশরাফির রংপুর রাইডার্স

শীতের রাতে উত্তাপ ছড়ানো ম্যাচ। এক পাশে মাশরাফি, গেইল, ডি ভিলিয়ার্স, হেলস। আরেক পাশে সাকিব, আন্দ্রে রাসেল, পোলার্ড, নারিন।

আগুনে পারফরম্যান্সের প্রত্যাশা ছিল তাদের কাছ থেকে। বেশ ভালোভাবেই সেই প্রত্যাশা পূরণ করেছেন তারা। শুধু প্রত্যাশা পূরণ করেননি, স্টেডিয়ামে আসা প্রায় ১৮ হাজার দর্শকের মন ভরিয়ে দিয়েছেন।

টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ৬ উইকেটে ১৮৬ রান তোলে ঢাকা ডায়নামাইটস। জবাবে ৮ উইকেট হাতে রেখে ১০ বল আগে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় রংপুর রাইডার্স।

টানা চতুর্থ জয়ে পয়েন্ট তালিকায় এখন শীর্ষে রংপুর। ১০ ম্যাচে ৬ জয় নিয়ে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা এখন উড়ছে। আর ঢাকা হারল টানা তৃতীয় ম্যাচ।

দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যান এবি ডি ভিলিয়ার্সের চমৎকার সেঞ্চুরির ওপর ভর করে এই দরুণ জয় পায় রংপুর। আসরে এর আগে তিন ম্যাচ খেললেও খুব বড় কোনো ইনিংস খেলতে পারেননি তিনি। এমন দিনে জ্বলে উঠলেন ঢাকার বিশাল সংগ্রহ টপকাতেও খুব একটা বেগ পেতে হয়নি তাঁর দলের।

চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ১০০ রানের হার না মানা অসাধারণ একটি ইনিংস খেলেন ভিলিয়ার্স। ৫০ বল খরচ করে ছয় ছক্কা এবং আটটি চারে ইনিংসটি সাজান তিনি। তাঁর পাশে থেকে চমৎকার আরেকটি ইনিংস খেলেছেন অ্যালেক্স হেলস। ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যান করেন ৮৫ রান।

ভিলিয়ার্সের এই সেঞ্চুরি চলমান বিপিএলের পঞ্চম শতক। এর আগে কুমিল্লা ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান এভিন লুইস, রাজশাহী কিংসের ইংলিশ ব্যাটসম্যান লরি ইভান্স, রংপুরের ইংলিশ ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স হেলস ও দক্ষিণ আফ্রিকার রাইলি রুশো একটি করে সেঞ্চুরি করেছিলেন।

এর আগে, টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে রংপুরের বোলারদের আটোসাটো বোলিংয়ে শুরুতে রানের জন্য লড়াই করতে হয় ঢাকার ওপেনারদের। এসময় হজরতউল্লাহকে আউট করে ঢাকা ডায়নামাইটসের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে ফরহাদ রেজা। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে বোলিংয়ে এসেই ঢাকার আফগান ওপেনারকে সাজঘরে ফেরান তিনি। দলীয় ৩৫ রানে সাজঘরে ফেরেন জাজাই। তার আগে ১৮ বলে ১৭ রান করেন তিনি।

ঢাকার শিবিরে ফরহাদ রেজার পর আঘাত হানেন নাজমুল ইসলাম অপু। ইনিংসের সপ্তম ওভারে বোলিংয়ে এসেই ঢাকা ডায়নামাইটসের আরেক ওপেনার সুনীল নারিনের উইকেট তুলে নেন তিনি। তার বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ফরহাদ রেজার দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হন নারাইন। সাজঘরে ফেরার আগে ১৯ বলে তিন চার ও দুই ছক্কায় ২৮ রান করেন এই উইন্ডিজ অলরাউন্ডার।

৫১ রানে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর দলের হাল ধরেন ঢাকা ডায়নামাইটসের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তৃতীয় উইকেটে রনি তালুকদারকে সঙ্গে নিয়ে ৫৪ রানের জুটি গড়েন সাকিব। ঢাকার অধিনায়ককে বোল্ড হয়ে ফেরান ফরহাদ রেজা। তার আগে ১২ বলে চারটি চারের সাহায্যে ২৫ রান করেন সাকিব। আর মাশরাফির বলে আউট হওয়া আন্দ্রে রাসেলকে ব্যক্তিগত ১৪ রানের মাথায় দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরান ফরহাদ রেজা।

দলীয় সর্বোচ্চ ইনিংসটা আসে রনি তালুকদারের ব্যাট থেকে। ৩২ বলে ৬টি চার ও একটি ছক্কায় ৫২ করে তিনি শফিউল ইসলামের বলে অ্যালেক্স হেলসকে ক্যাচ দেন। পরে শহীদুল ইসলামের বলে ইনসাইডেজ বোল্ড হন এক রান করা শুভাগত হোম। ২৩ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৭ রানে অপরাজিত থাকেন কাইরন পোলার্ড। এতে ৬ উইকেট হারিয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৮৬ রান সংগ্রহ করে সাকিব আল হাসানের ঢাকা ডায়নামাইটস।

রংপুরের হয়ে ফরহাদ রেজা দুটি উইকেট নেন। এছাড়া একটি করে উইকেট লাভ করেন মাশরাফি, নাজমুল, শফিউল ও শহীদুল।

জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ৫ রানে ক্রিস গেইল (১) এবং রাইলি রুশোর (০) উইকেট হারিয়ে শুরুতেই বিপাকে পড়ে রংপুর রাইডার্স। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে সেই বিপর্যয় কাটিয়ে দলকে দুর্দান্ত জয় এনে দেন এবি ডি ভিলিয়ার্স ও এলেক্স হেলস। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ঢাকার বোলারদের পিটিয়ে ১৮৪ রান তোলেন তারা। ৫০ বলে ৮টি চার ও ৬টি বিশাল ছক্কায় ১০০ রানে অপরাজিত থাকেন ডি ভিলিয়ার্স। আর ৫৩ বলে ৮টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৮৫ করে হেলসও অপরাজিত থাকেন।

১০ ম্যাচে ৬ জয় ও ৪ হারে ১২ পয়েন্ট নিয়ে বিপিএল টেবিলের শীর্ষে উঠেছে রংপুর। এছাড়া ৯ ম্যাচে ৫ জয় ও ৪ হারে ১০ পয়েন্ট নিয়ে চারে নেমে গেছে ঢাকা।

আরো পড়ুন