যশোর শিক্ষাবোর্ডের ৫৫ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মত রাতের বেলা এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কুষ্টিয়ার কুমারখালি কেন্দ্রে একজন শিক্ষার্থীর এক বিশেষ আবেদনের প্রেক্ষিতে রাতের বেলা পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধব চন্দ্র রুদ্র বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, শনিবার (২ ফেব্রুয়ারি) যে পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হবে শুধু সেই পরীক্ষাগুলোই দিনের পরিবর্তে রাতে অংশ নেবে রিকি। সে হিসেবে শনিবার অনুষ্ঠিতব্য এসএসসির বাংলা পরীক্ষায় দিনের পরিবর্তে রাতে অংশগ্রহণ করবে রিকি। নির্দিষ্ট ধর্ম অনুসরণ করায় রিকি হালদার (১৭) নামের ওই শিক্ষার্থীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যশোর বোর্ড কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রিকি হালদার এ বছর কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পারফেক্ট ইংলিশ ভার্সন স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। সে খ্রিস্টান ধর্মের ‘সেভেন ডে অ্যাডভান্টিস্ট সম্প্রদায়ের’। ধর্মীয় বিধান মতে সপ্তাহের শনিবার দিনের বেলা এই সম্প্রদায়ের মানুষের কোনো কিছু লেখা বারণ।
এ বিষয়ে মাধব চন্দ্র রুদ্র জানান, আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মীয় বিষয়টি আমলে নিয়ে বোর্ড কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার পরীক্ষার কেন্দ্র হচ্ছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী এমএন হাই স্কুল। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত তার পরীক্ষা নেওয়া হবে।
মাধব বলেন, ‘২ ফেব্রুয়ারি শনিবার থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। প্রথম দিন বাংলা পরীক্ষা শনিবার পড়ায় সে ওই কেন্দ্রে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। একইভাবে ৯ ফেব্রুয়ারি গণিত, ১৬ ফেব্রুয়ারি রসায়ন এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য বিজ্ঞান পরীক্ষা শনিবারে পড়ায় দিনের পরিবর্তে রাতে অংশ নেবে রিকি।’
যশোর বোর্ডের সেই একমাত্র পরীক্ষার্থী কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলার পারফেক্ট ইংলিশ ভার্সন স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের রিকি হালদার। তার রোল নম্বর ১১১৩৫২ ও নিবন্ধন নম্বর ১৫১৩৬০৪৫২২।
যশোর শিক্ষাবোর্ড এবার ১ লাখ ৮৪ হাজার ২০০ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে রিকি হালদার নামে একজন পরীক্ষার্থী খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী সেভেনথ ডে অ্যাডভেন্টস্ট সম্প্রদায়ের। তাদের ধর্মীয় রীতিমতে শনিবার দিনের বেলায় লেখা নিষিদ্ধ।
এ জন্য শনিবার ২ ফেব্রুয়ারি বাংলা, ৯ ফেব্রুয়ারি গণিত, ১৬ ফেব্রুয়ারি রসায়ন ও ২৩ ফেব্রুয়ারি উচ্চতর গণিত পরীক্ষা সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে তার চারটি বিষয়ের পরীক্ষা। রাতে একজন পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা গ্রহণের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই দায়িত্বে থাকবেন।
যশোর বোর্ডের ইতিহাসে এসএসসিতে এবারই প্রথম কোনো শিক্ষার্থীর জন্য আলাদাভাবে রাতে পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পরীক্ষাথী রিকি হালদারের বাবা রিপন হালদার বলেন, আমাদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী শনিবার দিনের বেলায় কোনো কাজ, বেচাকেনা ও লিখিও না। আমরাও শনিবার রাতে পরীক্ষা দিয়ে এসেছি। ছেলের পরীক্ষাও শনিবার পড়েছে। বোর্ডে আবেদন করেছি রাতে পরীক্ষা গ্রহণের জন্য।
কুমারখালী এমএন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব ফিরোজ মহম্মদ বাশার জানান, যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধব চন্দ্র রুদ্র এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়ায় তারা রিকি হালদারের রাতে পরীক্ষা নেওয়ার সার্বিক প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করেছেন।
ফিরোজ মহম্মদ বাশার বলেন, ‘অন্যান্য সব পরীক্ষার্থীর সঙ্গে রিকিকেও সকাল ৯টায় পরীক্ষার কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই তাকে অন্য একটি রুমে নিয়ে গিয়ে রাখা হবে। খাওয়া-দাওয়াসহ সব কিছু সে ওই রুমে বসেই করবে। রাতে পরীক্ষা শেষ হলে তাকে সেখান থেকে বাইরে বের হতে দেওয়া হবে।’
পরীক্ষাথী রিকি হালদারের বাবা রিপন হালদার বলেন, আমাদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী শনিবার দিনের বেলায় কোনো কাজ, বেচাকেনা ও লিখিও না। আমরাও শনিবার রাতে পরীক্ষা দিয়ে এসেছি। ছেলের পরীক্ষাও শনিবার পড়েছে। বোর্ডে আবেদন করেছি রাতে পরীক্ষা গ্রহণের জন্য।
তিনি বলেন, এনজিওতে চাকরি সুবাদে কুমারখালিতে আছি। আমাদের বাড়ি বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায়। যশোর অঞ্চলে এমন পরীক্ষার্থী কম হলেও ঢাকা বোর্ডে অনেকে রাতে পরীক্ষা দেবে।
রিকি হালদার এ বছর বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। তার বাবা রিপন হালদার এবং মা তৃষ্ণা হালদার দুজনই কুষ্টিয়ার অ্যাডভেন্টিস্ট ইন্টারন্যাশনাল মিশন স্কুলের (এইমস) শিক্ষক।
মূলত রিকি হালদার তার বাবা-মার স্কুলেরই শিক্ষার্থী। তবে এই স্কুল থেকে এখনো এসএসসি পরীক্ষার জন্য অনুমোদন প্রাপ্ত না হওয়ায় সে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পারফেক্ট ইংলিশ ভার্সন স্কুল থেকে সএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে বলে জানা গেছে।