এবার ফাঁসতে পারে মিতুর পরকীয়া প্রেমিকরাও!

দীর্ঘ নয় বছর প্রেম। প্রচণ্ড ভালোবাসতেন প্রেমিকাকে। বিয়ের কয়েকদিন আগে জানতে পারেন বিভিন্ন ছেলের সাথে হোটেলে রাত কাটায় তার প্রেমিকা। এরপরেও সব ভুলে বিয়ে করে শুরু করে সংসার। এর কিছুদিন পরে আবার জানতে পারে নতুন কিছু পরকীয়া প্রমিকদের সাথে রাত কাটাচ্ছে তার স্ত্রী। এতকিছু সহ্য না করতে পেরে অবশেষে নিজের জীবন দিয়ে দিলেন।

বলছিলাম চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও এলাকার মোস্তফা মোরশেদ প্রকাশ আকাশের কথা। পেশায় ছিলেন চিকিৎসক।

বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) রাত ৪টার দিকে নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ডাক্তার মুসতাফা মুরশেদ আকাশ। সেখানে নিজের আত্মহত্যার কথা জানান তিনি।

স্ট্যাটাসে নিজের স্ত্রীর একাধিক বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথা এবং ছবি ও এসএমএসের স্ক্রিন শট পোস্ট করেন তিনি। পোস্টে আত্মহত্যার জন্য নিজের বউকে দায়ী করেন। পাশাপাশি শ্বশুর শাশুড়িকেও দায়ী করেন তিনি।

এরপর বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) ভোর ৫ টার দিক চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার ডি ব্লকের ২ নম্বর রোডের ২০ নম্বরের নিজ বাসায় শরীরে ইনজেকশন পুশ করে আত্মহত্যা করেন তিনি।

আত্মহত্যা করা চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশের স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরীসহ ৬জনকে আসামি করে মামলা করেছেন নিহতের মা। তাদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টার দিকে নগরের নন্দনকানন এলাকা থেকে তানজিলা হক মিতুকে গ্রেফতার করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান।

চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশের আত্মহত্যায় তার স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর বয়ফ্রেন্ডদের সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে, তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. মিজানুর রহমান।

আজ শুক্রবার (১ ফেব্রয়ারি) দুপুরে আটক মিতুকে সংবাদকর্মীদের সামনে হাজির করে দেয়া ব্রিফিংয়ে তিনি একথা জানান।

মিজানুর রহমান বলেন, ‘ডা. আকাশের আত্মহত্যায় স্ত্রী মিতুর প্ররোচনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তে যদি ডা. আকাশের আত্মহত্যার বিষয়ে মিতু ছাড়াও তার ব্রয়ফ্রেন্ডদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, মামলার পর তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।’

ইতোমধ্যে মিতুর প্রাথমিক স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, আমানত শাহ মাজার এলাকা থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। আত্মঘাতী চিকিৎসক আকাশের ব্যক্তিগত মোবাইলটিও জব্দ করা হয়েছে। দুটি মোবাইলই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

অবশ্য ডা. আকাশের ফেসবুক থেকে স্ত্রী মিতুর ‘বহুগামিতা’ এবং এ-সংক্রান্ত যেসব ছবি ও মেসেঞ্জার চ্যাটের স্ক্রিনশট আপলোড করা হয়েছিল, সেগুলো ডিলিট করে দেয়া হয়েছে।

কে বা কারা এ কাজটি করেছেন, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলেও জানান মিজানুর রহমান।

তিনি জানান, ডা. আকাশের আত্মহত্যায় তার ফেসবুক আইডিতে স্ত্রীকে জড়িয়ে স্ট্যাটাস এবং পরিবারের মৌখিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রাতে মিতুকে আটক করা হয়েছে।

সংবাদকর্মীদের সামনে আনা হলেও কোনো কথা বলেননি মিতু। তবে তিনি পুলিশের কাছে স্বামীর আত্মহত্যা এবং দাম্পত্য জীবন নিয়ে ‘কিছু কথা আছে’, যেটি বলার ইচ্ছেপোষণ করেছেন।

প্রসঙ্গত ডা. আকাশ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বরকল বাংলাবাজার এলাকার মৃত আবদুস সবুরের ছেলে। তিনি ২০১৬ সালে ভালোবেসে মিতুকে বিয়ে করেন। পরবর্তী সময়ে স্ত্রীর সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে বলে তিনি স্ট্যাটাসে তুলে ধরেন। তার স্ট্যাটাসটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়।

ইনজেকশনের মাধ্যমে নিজের শিরায় বিষ প্রয়োগ করা আকাশকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনেরা। হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আরো পড়ুন