অনিয়মের অভিযোগে ডাকসু নির্বাচনের বর্জন করেছে ছাত্রদলসহ ৫টি প্যানেল। এরা হলো, ছাত্রদল, প্রগতিশীল ছাত্র জোট, স্বতন্ত্র জোট, স্বতন্ত্র স্বাধীকার জোট ও কোটা সংস্কার প্যানেল। আজকের নির্বাচন বাতিল করে পুন:তফসিলের সব ধরণের ক্লাশ-পরীক্ষা বর্জনেরও ঘোষণা দিয়েছে দিয়েছে তারা।
দুপুুরে, নেতাকর্মীদের উপর হামলা, রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি, ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে বাধাসহ নানা কারণ উল্লেখ করে ছাত্রদলসহ ওই ৫টি প্যানেল ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়। এ সময় ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান নির্বাচন কমিশন বাতিল, নীল দলের শিক্ষকদের কমিটি থেকে বাদ দিতে হবে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন দাবি জানান। এসব দাবি না পরবর্তীতে কর্মসূচি জানানো হবে বলেও ঘোষণা দেন।
এর আগে, সকালে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও, বেগম রোকেয়া ও বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলে খালি ব্যালট বাক্স পাওয়াকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে প্রশাসন। প্রায় সোয়া তিন ঘণ্টা পর, মৈত্রী হলে আবারও শুরু হয় ভোটগ্রহণ। তবে, খালি ব্যালট বাক্স দেখানোর দাবিতে সকাল থেকে রোকেয়া হলেও সোয়া ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর শুরু হয় ভোটগ্রহণ। তবে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে এই হলের ভোটগ্রহণ আবারও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিকেল তিনটায় রোকেয়া হলে ভোটগ্রহণ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য মুহাম্মদ সামাদ।
তবে বাকি হলগুলোতে নির্বিঘ্নে ভোটগ্রহণ চলছে। দুপুর দুইটা পর্যন্ত একটানা চলবে ভোটগ্রহণ।
মৈত্রী হলে অনিয়মের ঘটনায় হলের প্রভোস্ট ম্যানেজম্যান্ট বিভাগের শবনম জাহানকে অব্যাহতি দিয়ে ডিজাস্টার ম্যানেজম্যান্ট এন্ড ভালনারেল স্টাডিস ইন্সটিটিউটের পরিচালক মাহবুবা নাসরিনকে নতুন প্রভোস্ট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে বিশ্ববিদ্যালেয় উপ উপাচার্যকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিকে, সব হল গেট ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ করেছে ছাত্রদল। আর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ভোট দিয়ে ফের লাইনে দাঁড়িয়ে অন্যদের ভোট দেয়ায় বিঘ্ন করছে বলে অভিযোগ করেছে প্রগতিশীল ছাত্রঐক্য।
ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান, পাতানো নির্বাচন হতে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। প্রতিটি হলের গেটে ছাত্রলীগের নেতারা নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘গত রাতে ব্যালট পেপার ও অন্যান্য সরঞ্জমাদি ছাত্রলীগ নেতাদের রুমে নিয়ে যাওয়ার কথা আমরা শুনেছি এবং তারা ভোট দিয়েছে বলে আমরা শুনেছি। এছাড়া প্রতিটি হলের গেট ছাত্রলীগ নেতাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।’
অপরদিকে, প্রগতিশীল ছাত্রঐক্য ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী বলেন, ‘অধিকাংশ হলে যেটি করা হচ্ছে, ভোট দিয়ে আবার লাইনে দাঁড়াচ্ছে। ভোট দিয়ে আবার লাইনে দাঁড়িয়ে লাইনটাকে বড় করছে। ছেলে মেয়েরা ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে আছে ভোট দিতে পারছে না। মহসিন হল পুরোটাই ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে এবং আমার ওপর হামলা করার চেষ্টা করা হয়েছে।’
সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ জিএস প্রার্থী গোলাম রব্বানী বলেন, ‘কে করেছে বা কিভাবে করেছে বা কার কি অভিযোগ কোনও কিছু আসে নি। কারণ প্রত্যেকটা ব্যালট বাক্স দেখিয়ে ঢুকানো হয়েছে। আমি বলবো এটা হলো পূর্ব পরিকল্পনা করা। এটা একটা বানানো ঘটনা। এটা শুধুই সুষ্ঠু ভোটকে বিতর্কিত করার প্রয়াস।’
ভোটারদের কাছ থেকেও পাওয়া গেছে অভিযোগ। এক ভোটার বলেন, ‘আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চেয়েছিলাম, কিন্তু প্রশাসন-সরকার আমাদের সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারেনি। আমরা এই নির্বাচন মানিনা, ভোট বাতিল।’
এর আগে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর এ কে এম গোলাম রাব্বানী জানান, ‘প্রশাসনিক ভাবে কেউ এই কাজটি করেছে, সেটি বের করা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি কথা বলে দেখেছি, সবাই ভোট গ্রহণের পক্ষপাতি। একটা গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি কি হতে পারে সেটি নিয়ে আলোচনা করতে চাই আমরা।‘
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপ উপাচর্য মুহাম্মদ সামাদ জানান, ‘এই নির্বাচন স্থগিত। প্রয়োজনে পুনঃনির্বাচন নেয়া হবে এবং যারা এই ধরনের কাজের সাথে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং এটা কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য না।’
অন্যদিকে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ ভিপি প্রার্থী রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন মুহসীন হলে নিজের ভোট শেষে এ কথা বলেন ।