শেখ দীন মাহমুদ,পাইকগাছা(খুলনা): হারিয়ে যাওয়ার এক মাসেও সন্ধান মেলেনি গৃহবধূ রেশমা বেগম (২৬) এর। রেশমা পাইকগাছার আকবর গাজীর মেয়ে ও একই উপজেলার রেজাকপুর গ্রামের শেখ আব্দুর রশিদ’র স্ত্রী। গত ২৬ ফেব্রুয়ারী দুপুর আনুমানিক ২ টার দিকে সে তার মামার বাড়ী তালার জেঠুয়া থেকে একমাত্র ছেলে মাসুদ রানা(৭) কে রেখে কাউকে কিছু না জানিয়ে হারিয়ে যায়।
পারিবারিক সূত্র জানায়,রেশমা ঐ দিন সকালে স্বামীর বাড়ি থেকে মায়ের সাথে সন্তানকে নিয়ে মামার বাড়িতে বেড়াতে যায়। এঘটনায় তার মা রাবেয়া বেগম বাদী হয়ে ১৯ মার্চ তালা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন। যার নং-৬৮৮।
রেশমার স্বামী বাড়ির পারিবারিক সূত্র জানায়,রেশমা বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় ২ জোড়া স্বর্নর দুল,১ টি সোনার চেইন,লি ২টি,নাকের ফুল,পায়ের মলসহ প্রায় ৩ ভরি স্বর্ণালংকার,অজ্ঞাতে বাড়ির আলমারিতে রাখা নগদ প্রায় ২ লক্ষ টাকা নিয়ে যায়।
হারিয়ে যাওয়ার সময় তার পরনে হলুদ রংয়ের স্যালোয়ার কামিজ,কালো বোরখা ও লাল রংয়ের স্কার্ফ ছিল। তার গায়ের রং ফর্সা,মুখ মন্ডল গোলাকার,লম্বা চুল ও উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট বলে জানাযায়।
হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে উভয় পরিবারের পক্ষে সম্ভাব্য সব জায়গায় ব্যাপক খোঁজা-খুঁজির পরও তার কোন সন্ধান পাওয়াযায়নি। আসলে রেশমাকে কি কেউ অপহরণ করেছে? নাকি কোন অসৎ উদ্দেশ্যে নিজেই আতœগোপন করেছে? অপহরণ করলে কি উদ্দেশ্যে তাকে অপহরণ করা হয়েছে? আসলে সে কি বেঁচে আছে নাকি তাকে কেউ হত্যা করেছে? এমন নানা প্রশ্ন বার বার ঘুর পাক খাচ্ছে পরিবারের পাশাপাশি এলাকাবাসীর মনে।
এদিকে রেশমার ফিরে আসার অপেক্ষায় তার একমাত্র ছেলে ৭ বছরের মাসুদ রানাও শয্যাশায়ী। সারাক্ষণ রাস্তার পানে চেয়ে থাকে কখন তার মা ফিরে আসে সে অপেক্ষায়।
মায়ের ফিরে আসার অপেক্ষায় নির্ঘুম রাত শিশু মাসুদের
রেশমার মা মোছা:রাবেয়া বেগমের আশংকা কেউ তার মেয়েকে পরকীয়ার ফাঁদে ফেলে পরিকল্পিতভাবে অপহরণ করেছে। যদি তাই হয়,তা হলে কে সেই ব্যক্তি? আর কারাইবা জড়িত রয়েছে ঐ চক্রের সাথে? পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসতে পারে অজানা অনেক তথ্য। এমনটাই মনে করছেন তার পরিবার।
এব্যাপারে রেশমার স্বামী শেখ আব্দুর রশিদ জানান,বিয়ের কিছুদিন পর থেকে রেশমার সাথে তার মা রাবেয়া বেগমও তাদের বাড়িতে একসাথে বসবাস করত। ঘটনার দিন সকালে তার একমাত্র ছেলেকে নিয়ে শাশুড়ি রাবেয়া তার পিত্রালয়ে বেড়াতে যান। ঐদিন দুপুরের পর থেকে তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা বলে তাকে প্রথমত মোবাইলে জানো হয়। এরপর থেকে সম্ভাব্য সব জায়গায় ব্যাপক খোাঁজা-খুঁজি করেও এখন পর্যন্ত তার কোন সন্ধান মেলেনি।
প্রসঙ্গত,এর আগেও প্রায় দু’বছর আগে ২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রেশমা তার শিশু ছেলেকে তার মায়ের কাছে রেখে মামার বাড়ি থেকে নিখোজ হয়েছিল। ঐ ঘটনায়ও তার মা রাবেয়া বেগম বাদী হয়ে ১০.১০.১৭ তারিখে তালা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছিল। যার নং ছিল-৩৭২। সেবার প্রায় ২০ দিনের মাথায় ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে পরিবারের সদস্যরাই উদ্ধার করেছিল।
তবে সর্বশেষ এবার হারিয়ে যাওয়ার পর নানা আশংকা জেঁকে বসেছে উভয় পরিবারে। কেননা,যাওয়ার সময় মোটা অংকের টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যাওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে,কেউ বা কারা তাকে প্রলুব্ধ কিংবা পরকীয়ার ফাঁদে ফেলে পরিকল্পিতভাবে ঘর ছাড়া করেছে। আর এ বিষয়টিই তার পরিবারে নানা আশংকার জন্ম দিচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে,টাকার লোভে ঐ চক্র তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে হত্যা কিংবা গুম করে থাকতে পারে। হয়তো রেশমার কাছে চক্রের মুখোশ উন্মোচন হলেও ঘরে ফিরতে দেওয়া হচ্ছেনা তাকে। বাধ্য করা হয়েছে এলাকার বাইরে অজ্ঞাত স্থানে আতœগোপনে। আর সব আশংকাই যদি সত্য হয় তাহলে কারা জড়িত রয়েছে ঐচক্রে? এমন নানান প্রশ্নে রীতিমত দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তার পরিবার।
সর্বশেষ রেশমার একমাত্র ছেলে মাসুদের মনে আশংকার পাশাপাশি একটাই জিজ্ঞাসা ফিরে আসবে তো তার মা? আদর করে ঘুম পাড়ানি গল্প বলে ঘুম পাড়াবে তো আগের মত? খবরের খোঁজে রশিদের বাড়িতে গেলে একমাত্র ছেলে মাসুদ দৌড়ে এসছিল,এই বুঝি তার মায়ের আসার খবর নিয়ে এসেছে! তবে আশাহত কোমল হৃদয়,আজো তার মায়ের ফিরে আসার খবর আসেনি। ফিরে আসার অপেক্ষায় মাসুদ হয়তো আজও নির্ঘুম রাত কাটাবে! সূত্র: টিটিবি