অতিরিক্ত ১ হাজার টাকার জন্য পরীক্ষা দেয়া হলো না: সেই শিক্ষকের বিচার দাবি

শেরপুর জেলা প্রতিনিধি; চলতি বছরে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল মো. শামীম মিয়ার। কিন্তু ফরম ফিলাপের জন্য অতিরিক্ত এক হাজার টাকা প্রধান শিক্ষককে না দেওয়ায় মেলেনি অ্যাডমিট কার্ড। এতে আর কেন্দ্রে বসতে পারেনি ওই শিক্ষার্থী। ফলে পরীক্ষা দেওয়া হলো না পিতৃহীন শামীমের। আর এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষকের বিচারের দাবি জানান স্থানীয় শিক্ষার্থীরা, এলাকার লোকজন ও মানবাধিকার কর্মীরা।

বুধবার (৩ মে) দুপুরে এ ঘটনার প্রতিবাদে উপজেলার কয়রোড চৌরাস্তা মোড়ে এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে স্থানীয় জনগণ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। মানববন্ধনে প্রায় তিন শতাধিক লোক উপস্থিত ছিলেন।

এসময় বক্তারা বলেন, সরকার দেশে শতভাগ শিক্ষার ব্যবস্থা করতে নানামুখী প্রচেষ্টা করছে। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে শিক্ষা ও উপবৃত্তির ব্যবস্থা করেছে। আর ঘাগড়া দক্ষিণপাড়া ফজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল হক টাকা ছাড়া কিছু বুঝে না। হতদরিদ্র ও এতিম শিক্ষার্থী শামীমের আর্তনাদেও তিনি অতিরিক্ত ১ হাজার টাকার জন্য প্রবেশপত্র দেয়নি। যার কারণে কোমলমতি এ শিক্ষার্থী পরিক্ষার হলে বসতে না পেয়ে জীবনে হোঁচট খেল। অর্থলোভী নুরুল হকের এমন কর্মকাণ্ডের জন্য একজন ছাত্রের ১০ বছরের সাধনা দুমড়েমুচড়ে গেল, এর দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানান তারা।

বক্তারা আরও বলেন আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হকসাবকে আইনের মুখোমুখি করতে হবে। আর এই অর্থলোভী শিক্ষকের চাকরি করার দরকার নেই, তার বরখাস্তের দাবিও জানান তারা। তার ব্যাপারে নানান সময় নানান বিষয়ে বিতর্কও উঠেছিল। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দফতরের সহযোগিতা কামনা করেন বক্তারা।

মানববন্ধনে হাতিবান্ধা ইউপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আকবর আলী, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন শেরপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মানিক মিয়া, সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম রাজু, সৃষ্টি হিউম্যান রাইটস সোসাইটির জেলা সভাপতি আলমগীর আল আমিন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আজকের তারণ্যের সভাপতি রবিউল ইসলাম রতন, বাংলাদেশ জাসদ শেরপুর জেলা শাখার সহ সভাপতি আবুল কালাম আযাদ, হাতিবান্ধা ৮নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মহসিন আলী, জুলগাঁও পুরাতন মসজিদের সদস্য রবিন মিয়া, শিক্ষার্থীর মামা বকুল মিয়া, আরিফ হোসেন ও মা শিরিনা বেগমসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীবৃন্দ, ঝিনাইগাতী থানা পুলিশ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে দুপুরে এ প্রতিবেদক ঘাগড়া দক্ষিণপাড়া ফজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে যায়। সেখানে প্রধান শিক্ষক নুরুল হকে পাওয়া যায়নি, তার চেয়ার ফাঁকা। বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকরাও তার ব্যাপারে কিছু জানাতে পারেনি। পরে সিনিয়র শিক্ষক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, শুনেছি প্রধান শিক্ষক অসুস্থ তাই স্কুলে আসেনি। আমি নিজেও বারবার ফোন দিয়েছি, কিন্তু ফোনে পায়নি।

শামীমের ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষক আব্দুল ওয়াদুদ আরও বলেন, শামীম ফরম ফিলাপের সময় প্রধান শিক্ষককে দুই হাজার টাকা দিয়েছিল। দুই হাজার ছাড়াও অতিরিক্ত কিছু টাকা চাইলে শামীম দিতে পারেনি। পরে শুনলাম অ্যাডমিট কার্ডের জন্য ছেলেটা পরীক্ষা দিতে পারেনি। এটা খুবই দুঃখজনক।

জানতে চাইলে এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রেজুয়ান আহম্মেদ বলেন, বিষয়টি জেনে আমি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে খোঁজ নিতে বলেছি।

এ বিষয়ে শেরপুর -৩ আসনের সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল হক চাঁন বলেন, শামীমের বিষয়টি আমি অবগত হলাম। ব্যাপারটি আমি দেখবো।

শামীমের বাড়ি শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার জুলগাঁও গ্রামে। উপজেলার ঘাগড়া দক্ষিণপাড়া ফজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের চলতি এসএসসি পরীক্ষার্থী সে। কৃষক পরিবারের এই সন্তানের বাবা আব্বাস আলী মারা গেছেন।

আরো পড়ুন