বারডেম হাসপাতালে সেদিন এডিসি হারুনকে নিয়ে যা ঘটেছিল সে বিষয়ে মুখ খুলেছেন এডিসি সানজিদা আফরিন। তিনি শনিবারের ঘটনার জন্য স্বামী রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক মামুনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন।
মঙ্গলবার একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া বক্তব্যে সানজিদা বলেন, হারুন স্যারের ওপর হামলাকারীদের উদ্দেশ্য ছিল ওটিটি কক্ষে তাকে ও আমাকে একসঙ্গে দাঁড় করিয়ে ভিডিও করা।
এডিসি সানজিদা বলেন, ‘কিছুদিন ধরেই আমার কার্ডিয়াক সমস্যা হচ্ছিল। ২০১৯ সাল থেকেই আমি হাইপার টেনশনের ওষুধ খাচ্ছিলাম। গত ৪-৫ মাস ধরে সমস্যাটা বেড়ে যায়। দু-তিন সপ্তাহ ধরে বুকে ব্যথা বেড়ে যাচ্ছিল। শনিবার ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে যাই।
শনিবার রাতে শাহবাগ থানায় ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে মারধর করেন এডিসি হারুন অর রশিদ। এ ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। হারুনকে প্রথমে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও পরে রংপুর রেঞ্জে বদলি করা হয়।
এ ঘটনায় ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ গতকাল দাবি করেন, এডিসি হারুনকে প্রথমে মারধর করেন সানজিদার স্বামী এপিএস আজিজুল হক মামুন। সেই ঘটনাও তদন্ত করা উচিত।
এরপরই বারডেমে সেদিন কী ঘটেছিল সেটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যাকে ঘিরে ঘটনার সূত্রপাত সেই নারী এডিসি সানজিদার বিভিন্ন বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। সর্বশেষ হারুনের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কে জড়ান বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি বেশ কয়েক মাস ধরে তার স্বামী ও রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল গোপনে নজরদারি করছিলেন। ঘটনার পর ডিএমপি সদর দপ্তরে কর্মরত এডিসি সানজিদা অন্তরালেও থাকলেও মঙ্গলবার মুখ খুলেছেন গণমাধ্যমে।
এডিসি সানজিদা বলেন, ‘কিছুদিন ধরেই আমার কার্ডিয়াক সমস্যা হচ্ছিল। ২০১৯ সাল থেকেই আমি হাইপার টেনশনের ওষুধ খাচ্ছিলাম। গত ৪-৫ মাস ধরে সমস্যাটা বেড়ে যায়। দু-তিন সপ্তাহ ধরে বুকে ব্যথা বেড়ে যাচ্ছিল। শনিবার ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে যাই।
এডিসি হারুন স্যারকে বিষয়টা জানালে তিনি ওসির মাধ্যমে একটি সিরিয়াল ম্যানেজ করে দেন। সন্ধ্যা ৬টার পর সিরিয়াল পাই। একটু পর স্যার (এডিসি হারুন) আসেন। আমি ওই সময় ইটিটি করাচ্ছিলাম। ইটিটির শেষ পর্যায়ে আমি রুমের বাইরে হট্টগোল চিৎকার-চ্যাঁচামেচির শব্দ শুনতে পাই। প্রথমে স্যারের শব্দ শুনতে পাই। তিনি বলছিলেন, আপনি আমার গায়ে হাত তুলছেন কেন? কিছুক্ষণ পর আমি বাইরে বের হয়ে দেখি, আমার হ্যাজবেন্ড অস্বাভাবিক অবস্থায় এবং তার সঙ্গে কয়েকজন ছেলে মিলে স্যারকে (এডিসি হারুনকে) মারতে মারতে একটা রুমের ভেতরে নিয়ে যায়। তখন আমাকে চড়-থাপ্পড় দেয় আমার হ্যাজবেন্ড। এ সময় আমার স্বামী খুবই উত্তেজিত অবস্থায় ছিলেন। তিনি তখন সেখানে কেন গিয়েছিলেন তা আমি জানি না।’
সানজিদা আরও বলেন, ‘তারা স্যারকে মারতে মারতে টেনে-হিঁচড়ে রুমের ভেতর নিয়ে আসেন। তাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য স্যার ইটিটি রুমের ভেতর এক কোণায় গিয়ে দাঁড়ান। এ সময় আমার স্বামী দুজন ছেলেকে ঘটনাস্থলের ভিডিও করতে বলেন। আমি তখন ইটিটি ড্রেসে ছিলাম। আমি চিৎকার করে আমার স্বামীকে বলছিলাম, এ রুমে কোনো ছেলে মানুষ ঢোকার কথা নয়। আপনি এত লোক কেন ঢুকিয়েছেন?
ভিডিও করতে বলছেন কেন? এ সময় আমার স্বামী আমাকে থাপ্পড় মারেন। তখন আমার গাড়িচালক ঘটনাস্থলে এসে আমার এবং স্বামীর মাঝখানে দাঁড়ান। ড্রাইভারের গায়ের ওপর দিয়ে এসে আমাকে মারধর করা হয়। দু-তিনজন ছেলে যখন ভিডিও করছিলেন তখন একজনের কাছ থেকে আমি ফোনটা নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। ওই ছেলের সঙ্গেও আমার হাতাহাতি অবস্থা হয়। তাদের উদ্দেশ্যে ছিল আমাকে এবং স্যারকে (এডিসি হারুন) একসঙ্গে দাঁড় করিয়ে ভিডিও করা। অসৎ লক্ষ্যেই এটা করানোর চেষ্টা হচ্ছিল। স্যারকে মারার সময় তারা আমাকেও মারধর করেছে। আমার বডিগার্ডকেও মারধর করেছে। একপর্যায়ে তারা স্যারকে রুম থেকে বের হতে বলছিলেন। তখন স্যার বলছিলেন, আমি এখান থেকে বের হলে তো আমাকে মেরে ফেলবেন। আমি থানার ফোর্সদের আসতে বলেছি। তারা এলে আমি এখান থেকে বের হব। পরে থানা থেকে ফোর্স আসে। এরপর সবাই নিচে নেমে যায়।’