লক্ষ্মীপুরে আদালতের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যার আগে রাকিব হোসেন নামে যুবক ফেসবুকে লাইভে যান। দেড় মিনিটের ভিডিও বার্তায় তিনি জীবন নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন। বিয়ে করে সুখী হতে পারেন নাই বলেও জানান। লাইভে বাবা-মায়ের কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন।
বুধবার সাড়ে দুপুর ১২টার দিকে লক্ষ্মীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনের ৫ তলার ছাদ থেকে লাফ দেন রাকিব হোসেন।
রাকিব লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড উত্তর মজুপুর এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলামের ছেলে। পৌরসভার মোটকা মসজিদ এলাকায় বড় ভাই সোহেল হোসেনের সঙ্গে তিনি ভাঙাড়ি ব্যবসা করতেন।
আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে নিহত রাকিবের বড় ভাই সোহেল হোসেন জানান, পারিবারিক কিছু বিষয় নিয়ে সকালে রাকিবকে বকাঝকা করা হয়। পরে সে দোকান থেকে অভিমান করে বের হয়ে আসেন। এর পর রাকিব আত্মহত্যা করেছেন বলে খবর পাই।
আত্মহত্যার আধাঘণ্টা আগে ফেসবুকে ১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিওবার্তা দেন রাকিব। ভিডিওতে তার এ মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নন বলে উল্লেখ করেন। আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে আভাসও দেন তিনি।
লাইভে রাকিব বলেন, ‘মা আঁই সজ্ঞানে মইরতে যাইতাছি। আঁই তামা চুরি করি ন মা। জীবনে অনেক ভুল কইরছি মা। আর মৃত্যুর লাই কেউ দায়ী নাই। আঁই নিজের ইচ্ছায় যাইতাছি মা। অনেক ভুল কইরছি মা। একটা মাইয়ার জীবনও নষ্ট কইরছি। আঁই সুমাইয়ারে বিয়া কইরছি। বিয়া করি সুখী হইতে পাইরতাছি না। আর কইলজা হাডি যা। আর অ্যাকাউন্টে ৭৫ হাজার টাকা আছে মা। বাড়ির ড্রয়ারের মধ্যে আর এটিএম কার্ড আছে’। লাইভে ডেভিড কার্ডের পিন নম্বরও উল্লেখ করেন রাকিব।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, আদালতে যখন যে যার মতো কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ একটি শব্দ শুনতে পান লোকজন। তাৎক্ষণিক দেখতে পান জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনের সামনে এক যুবক পড়ে আছেন। আদালতে উপস্থিত থাকা মানুষ জড়ো হতে থাকেন। পরে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের লোকজন।
পুলিশের কোর্ট পরিদর্শক কিশোর কুমার জানান, আদালত ভবনের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে এক যুবক আত্মহত্যা করেছেন। তার মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আনোয়ার হোসেন বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই রাকিবের মৃত্যু হয়েছে। লাশ মর্গে রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ওসি জসীম উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।