ads
মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ১২:৫৮ অপরাহ্ন

ধনাঢ্য বয়স্কদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নিতেন দুই বোন

রিপোর্টারের নাম
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ৩২ বার পঠিত

ষাটোর্ধ্ব ২০ থেকে ২৫ জন ধনাঢ্য ব্যক্তি। যাঁদের কেউ শিল্পপতি, কেউ বা বড় ব্যবসায়ী। তাঁদের দিকেই নিশানা ঠিক করে একটি প্রতারক চক্র। চক্রের ‘মূল হোতা’ পারভীন আক্তার নূপুর টাকার বিনিময়ে এসব ব্যক্তির নাম ও মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করেন একটি ট্রাভেল এজেন্সির এক কর্মকর্তার কাছ থেকে। ওই সব নম্বরের বিপরীতে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করেন একটি বেসরকারি মুঠোফোন অপারেটরের কর্মী রুবেল মাহমুদ অনিকের কাছ থেকে।

এরপর নূপুর ওই বয়স্ক ব্যক্তিদের মুঠোফোনে কল করতেন। কখনো সাংবাদিক, কখনো-বা সমাজকর্মী হিসেবে নিজের পরিচয় দিতেন। পরিচয়পর্ব শেষে সখ্য গড়ে তুলতেন, নিয়মিত খোঁজ-খবর নিতেন। এভাবে দেখা-সাক্ষাৎ, পরে আরো অন্তরিকতা। একপর্যায়ে নূপুর তাঁদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাঁদের সঙ্গে হওয়া আন্তরিক কথোপকথনের অডিও রেকর্ড সংগ্রহে রাখতেন তিনি। এ ছাড়া ঘনিষ্ঠ ছবিও কাছে রাখতেন নূপুর।

হেনস্তা করার মতো পর্যাপ্ত প্রমাণ রাখার পর উল্টো মনোভাব দেখানো শুরু করতেন নূপুর। শুরু হতো হুমকি-ধমকি দেওয়া। হুমকি দিয়ে বলা হতো, ‘আমার কাছে থাকা সব রেকর্ড ও ছবি আপনার পরিবার বা স্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। আপনার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছে, সেই কথাও জানিয়ে দেব। আর তা না হলে আমাকে টাকা দিতে হবে।’

যাঁদের নূপুর এই হুমকি দিতেন, তাঁদের বেশির ভাগই সমাজে প্রভাবশালী এবং সম্মানিত ব্যক্তি। সেজন্য, মান-সম্মানের ভয়ে তাঁরা মুখ খুলতে পারতেন না। ফলে নূপুরের চাহিদামতো টাকা দিতে বাধ্য হতেন তাঁরা। এই প্রক্রিয়ায় নূপুর ২০ থেকে ২৫ জন ধনাঢ্য ব্যক্তির কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।

প্রতারণার শিকার একাধিক ব্যক্তি এ বিষয়ে অভিযোগ জানান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে নূপুর ও তাঁর বড় বোনসহ প্রতারক চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে রাজধানীর হাতিরঝিল থানা পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া চারজন এসব বিষয়ে প্রাথমিকভাবে স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র।

বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ ও একই বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হাফিজ আল ফারুক এ তথ্য জানিয়েছেন।

গত ৩ ডিসেম্বর হাতিরঝিল থানায় ৬৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি এ বিষয়ে মামলা করেন। মামলার তদন্তে নেমে গত বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রাজধানীর মোহাম্মদপুর, নিকেতন, রমনা ও বাড্ডা এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন চক্রের প্রধান পারভীন আক্তার নূপুর (২৮), তাঁর বড় বোন শেফালী বেগম (৪০), মতিঝিলের পারফেক্ট ট্রাভেল এজেন্সির কর্মী শামসুদ্দোহা খান ওরফে বাবু (৪০) এবং মুঠোফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠানের কাস্টমার সার্ভিস বিভাগের কর্মী রুবেল মাহমুদ অনিক (২৭)।

ডিসি মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণায় নেতৃত্ব দিতেন পারভীন আক্তার নূপুর। ফাঁদে ফেলার পর ২০ থেকে ২৫ জনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়েছে চক্রটি। এ তথ্য আমাদের কাছে আছে। তাদের কাজই টার্গেট ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত অডিও ও ছবি সংগ্রহ করে হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে বিপুল টাকা হাতিয়ে নেওয়া। প্রথমে ধনাঢ্য এসব ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করা হতো গ্রামীণফোনের সার্ভার থেকে।’

হারুন অর রশীদ আরো বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত শামসুদ্দোহা একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করার কারণে নিয়মিত বিদেশগামী ধনাঢ্য ব্যক্তিরা যেতেন সেখানে। সেখান থেকে তাঁদের মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করতেন শামসুদ্দোহা। এ ছাড়া বিভিন্ন শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এবং উচ্চপদস্থ চাকরিজীবীর মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে পারভীন আক্তার নূপুরকে দিতেন তিনি। এরপর নূপুর ওইসব ব্যক্তির সম্পর্কে বিস্তারিত জানতেন গ্রামীণফোনের সার্ভিস সেন্টারের কর্মী রুবেল মাহমুদ অনিকের কাছ থেকে। টাকার বিনিময়ে অনিক সিম রেজিস্ট্রেশনে ব্যবহৃত একান্ত গোপনীয় তথ্যগুলো দিতেন পারভীনকে। এরপর সখ্য গড়ে তুলে প্রেমের ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নিত চক্রটি। মূলত ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের টার্গেট করত চক্রটি।’

‘শুধু চক্রের হোতা পারভীন আক্তার নূপুর গত কয়েক মাসে তাঁর ব্যক্তিগত মুঠোফোন দিয়ে ১৫ থেকে ২০ জন ব্যক্তির কাছ থেকে পাঁচ থেকে ৫০ লাখ পর্যন্ত টাকা আদায় করার প্রমাণ আছে আমাদের কাছে। এমনকি রুবেলের মোবাইল নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে ছয়টি গ্রামীণফোন নম্বর পাঠিয়ে মোবাইল নম্বরধারী ব্যক্তির সিম রেজিস্ট্রেশন তথ্য (নাম, পিতার নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ, জন্ম নিবন্ধন নম্বর) জানতে চান পারভীন। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে রুবেল গ্রামীণফোনের সার্ভার থেকে এ তথ্যগুলো সংগ্রহ করে হাতে লিখে পারভীনকে দেন। পরে ইসা নামের একজন আইনজীবীকে এসব তথ্য সরবরাহ করেন পারভীন। এরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এই চক্রে পাঁচ-ছয়জন সদস্য আছে।’ যোগ করেন ডিসি।

হারুন অর রশীদ বলেন, ‘প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিতে যদি কোনো ঝামেলা হতো তাহলে ব্যবহার করা হতো ভুয়া আইনজীবী। আইনজীবী ইসা তাদের কল করে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মামলা দায়েরের কথা বলে হুমকি দিতেন। তিনি এখনো পলাতক আছেন। ইসা বিভিন্ন মিথ্যা ও বানোয়াট বিল ভাউচার তৈরি করার কথাও জানাতেন প্রতারিতদের। এ ছাড়া এসব ব্যক্তির কাছে দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে পারভীনের বড় বোন শেফালী ওইসব ব্যক্তিকে কল করে মামলার হুমকি দিতেন। এদের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় প্রতারণা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা করা হয়েছে।’

ডিসি হারুন বলেন, ‘এই চক্রের সঙ্গে যারা যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এমন হলে আমাদের ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্যের নিরাপত্তা কোথায়? মোবাইল অপারেটরের কোনো গাফিলতি থাকলে বা এই তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।’

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পারভীন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। মূলত তার কোনো পেশা নেই। পাঁচ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে গুলশানের নিকেতনের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে বসবাস করেন তিনি। তাঁর বড় বোন শেফালী তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। তিনি চাঁদনী চক মার্কেটে স্কার্ফ, হিজাব ও বোরকা বিক্রি করেন। আর অবিবাহিত শামসুদ্দোহা মোহাম্মদপুরে শেফালীর ফ্ল্যাটেই থাকেন। রুবেল তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন নাবিস্কো মোড়ে অবস্থিত গ্রামীণফোন সার্ভিস সেন্টারে কাজ করেন। ইসা আইনজীবী ও একটি ল’ ফার্মে কাজ করেন বলে প্রতারিত ব্যক্তিদের কাছে নিজের পরিচয় দিয়েছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, পারভীনের দৃশ্যমান কোনো পেশা নেই। অথচ তিনি প্রায় এক লাখ টাকা ভাড়া দিয়ে গুলশানের নিকেতনের একটি বাসায় থাকেন। তাঁর মেয়ের স্কুলের বেতন প্রতি মাসে প্রায় ১০ হাজার টাকা। তিনি বনানীর ১১ নম্বর রোডের ই-ব্লকের গ্রিন ডিলাক্স হাউজ নামের একটি জিমে নিয়মিত যান। সেখানে প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা বিল দেন। গুলশান থানায় তিনি একবার অভিযোগ করেছিলেন যে, তার ছয়টি লিপস্টিক চুরি হয়েছে, যার দাম ৯০ হাজার টাকা।

সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

Prayer Time Table

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ৩:৫২
  • ১১:৫৮
  • ১৬:৩৩
  • ১৮:৪০
  • ২০:০৩
  • ৫:১৩
ইঞ্জিনিয়ার মোঃ ওয়ালি উল্লাহ
নির্বাহী সম্পাদক
নিউজ রুম :০২-৯০৩১৬৯৮
মোবাইল: 01727535354, 01758-353660
ই-মেইল: editor@sristybarta.com
© Copyright 2023 - SristyBarta.com
Develop By : BDiTZone.com
themesba-lates1749691102