শিশু ধর্ষণ চেষ্টা মামলায় অভিযুক্ত মো. মতিউর রহমান (মুক্ত মিয়া) উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে এলাকায় আসলে তাকে ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করা হয়। মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার নিয়ে করা হয়েছে শোডাউন। বাদ যায়নি মিষ্টি বিতরণও।
এ ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার বিকেলে আখাউড়া উপজেলার হীরাপুর গ্রামে। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। মুক্ত মিয়ার ফুলের মালা পরিহিত ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় নিন্দার ঝড় উঠেছে।
এলাকাবাসী ও মামলার সূত্রে জানা গেছে, ওই শিশুর বাবা নেই। মামার বাড়ি উপজেলার হীরাপুরে বসবাস করে স্থানীয় নুরপুর লামারবাড়ি মাদ্রাসায় ২য় শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। ওই ছাত্রীকে খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে গত ১৫ জুলাই সকালে একটি পরিত্যক্ত ঘরের বারান্দায় নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন পাশের বাড়ির অভিযুক্ত মো. মতিউর রহমান ওরফে মুক্ত মিয়া (৮০)। এ সময় ওই ছাত্রীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে। এ সময় অভিযুক্ত মুক্ত মিয়া পালিয়ে যায়।
দীর্ঘ দিন ধরে কোন বিচার না পেয়ে গত ১৭ আগস্ট ওই ছাত্রীর মা মতিউর রহমান (মুক্ত মিয়া) কে আসামি করে আখাউড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ওই মামলায় ৯ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট থেকে জামিন পান মো. মতিউর রহমান (মুক্ত মিয়া)। জামিন নিয়ে এসে সোমবার বিকেলে এলাকায় পৌঁছালে তাকে ফুলের মালা পরিয়ে ও ফুল ছিটিয়ে বরণ করে নেয় তার পক্ষের লোকজন। পরে মোটরসাইকেল ও কয়েকটি প্রাইভেটকার নিয়ে ফুলের মালা পরিয়ে এলাকায় শোডাউন ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়। তার ছেলেরা বলেছেন আমার বাবা ওমরা হজ্ব করে এসেছেন!
হিরাপুর গ্রামের কৃষক আমির হোসেন বলেন, মুক্ত মিয়া যে ঘটনা ঘটিয়েছেন তার তীব্র নিন্দা জানাই। এতো নিকৃষ্ট ঘটনা আগে কখনো শুনি নাই, এটার বিচার না হলে দেশে আইন বলে কিছু থাকবে না। মেয়েটি এতিম মামার বাড়িতে থাকে। তার মামাও কৃষিকাজ করে।
একই গ্রামের প্রবীণ মুরুব্বী আবুল খায়ের বলেন, গত সোমবার মুক্ত মিয়া জামিন পেয়ে এলাকায় আসে। তার ছেলে তাকে কয়েকটা প্রাইভেটকার, মোটর সাইকেল দিয়ে শোডাউন দিয়ে গলায় ফুলের মালা পরিয়ে ঘুরিয়ে বেড়ায়। আমাদেরকে মিষ্টি খাওয়ার দাওয়াত দেয়। আমরা কেউ মিষ্টি খেতে যাইনি।
আখাউড়া স্থলবন্দরে সিএন্ডএফ এর ব্যবসায়ী ও হিরাপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্বাস উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন. মুক্ত মিয়া আমার আপন মামা। উনি যে ঘটনাটি ঘটিয়েছেন তার সত্যতা পেয়েছি। চেষ্টা করেছি পরিবারের লোকজন নিয়ে মেয়ের পক্ষের সাথে সমাধান করার জন্য। শুনেছি মামা উচ্চা আদালত থেকে জামিনে এসেছে। এসেই গলায় ফুলের মালা পরে এলাকায় শোডাউন ও মিষ্টি বিতরণ করেছে। এটা ভাল হয়নি। আমি তার নিন্দা জানাই।
ওই নির্যাতিত শিশুর মা বলেন, আসামি জামিন পেয়ে খুশিতে মিষ্টি বিতরণ করেছে। ফুলের মালা পরে আমাদের বাড়ির পাশে মিছিল দিচ্ছেন। ওরা প্রভাবশালী। আমাদের হুমকি ধামকি দিচ্ছে। আমরা আতঙ্কে আছি।
মো. মতিউর রহমান (মুক্ত মিয়া)-এর ছেলে অ্যাডভোকেট মিলন বলেন, আমার বাবাকে মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানোর জন্য মামলা দিয়েছে। মহামান্য হাইকোর্ট আমার বাবার বয়স বিবেচনা করে জামিন দিয়েছেন।
অভিযুক্ত মো. মতিউর রহমান (মুক্ত মিয়া) বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। আমি মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলি তাই আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্রাহ্মাণবাড়িয়া জেলা বারের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মাহবুবুল হক খোকন বলেন, কোন আসামি জামিনে আসলে উল্লাস করা কাম্য নয়।
আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রসুল আহমদ নিজামী বলেন, মামলাটি তদন্তাধীন আছে।