করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে অনেক বাস্তবতা। এই যেমন বদলে গেছে টেস্ট ক্রিকেটের জন্য মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে নির্বাচকদের ভাবনা। লম্বা বিরতির পর এই বাঁহাতি পেসারকে দারুণ চনমনে ও ফুরফুরে মনে হচ্ছে। অনুশীলনে দেখা যাচ্ছে ক্ষুরধার। আপাতত তিন সংস্করণে খেলার চাপও নেই। সব মিলিয়ে টেস্টের জন্য শুধু বিবেচনায় রাখাই নয়, সম্ভাব্য বোলিং পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ভাবা হচ্ছে মুস্তাফিজকে।
মুস্তাফিজ সবশেষ টেস্ট খেলেছেন দেড় বছর আগে, নিউ জিল্যান্ডে। এ বছর তাকে রাখা হয়নি বোর্ডের লাল বলের চুক্তিতে। গত মার্চে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট স্কোয়াডে তাকে রাখা হয়েছিল বটে। তবে জাতীয় দলের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো তখন বলেছিলেন, “খেলানোর জন্য নয়, মুস্তাফিজকে নেওয়া হয়েছে বোলিং কোচের সঙ্গে কাজ করার জন্য।” সবকিছুতেই পরিষ্কার ফুটে উঠছিল, টেস্টের ভাবনায় নেই এই পেসার।
সেই মুস্তাফিজকে কদিন আগে আইপিএল খেলার ছাড়পত্র দেয়নি বিসিবি। কারণ হিসেবে বিসিবির ক্রিকেটার পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম খান বলেছেন জাতীয় দলের শ্রীলঙ্কা সফরের কথা। আনুষ্ঠানিক সূচি প্রকাশ করা না হলেও এই সফরে শুধু টেস্ট ম্যাচই খেলার কথা বাংলাদেশের। টেস্টের মুস্তাফিজকে নিয়ে ভাবনা বদলের ইঙ্গিত মেলে সেখানেই। সেটি আরও খোলাসা করে বললেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন।
“অবশ্যই ওকে টেস্টের জন্য বিবেচনা করছি আমরা। মুস্তাফিজ কিন্তু বরাবরই আমাদের সেরা বোলারদের একজন। তখন একটা ব্যাপার ছিল যে অনেক বেশি খেলা ছিল। ওর চাপ কমানো দরকার ছিল। পাশাপাশি আমরা চেয়েছিলাম, লাল বলে একটু উন্নতি করুক। জিম্বাবুয়ে সিরিজের স্কোয়াডে যখন রেখেছিলাম, তখন কাজ করেছে।”
“এই ৫ মাসের বিরতির পর ওকে খুবই চনমনে মনে হচ্ছে। ক্ষুধা বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে। তাছাড়া শ্রীলঙ্কায় ৩ টেস্ট খেলতে হবে আমাদের। পেসারদের ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলাতে হবে। কার কী অবস্থা হয়, কে জানে। মুস্তাফিজকে সেখানে লাগবে।” প্রধান নির্বাচক বললেন টিম ম্যানেজমেন্টের চাওয়ার কথাও।
“টিম ম্যানেজমেন্টও ওকে চাচ্ছে। একজন বাঁহাতি পেসার থাকলে আক্রমণে বৈচিত্র আসে। এছাড়া এখনকার ম্যানেজমেন্ট কিন্তু ওকে নিয়ে আশাবাদী। বিশেষ করে ওটিস গিবসন (বোলিং কোচ) ওর সঙ্গে কাজ করেছে, আরও করবে। আমাদের বিশ্বাস, টেস্টেও মুস্তাফিজ ভালো করবে।”
মার্চের জিম্বাবুয়ে সিরিজের সময় কোচ ডমিঙ্গো বলেছিলেন, “টেস্টের জন্য মুস্তাফিজ এখনও প্রস্তুত নয়…যতদিন না সে টেকনিক্যাল কিছু কাজ করছে, যাতে ডানহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য বল ভেতরে ঢোকাতে পারে।”
সেই সিরিজের পরপরই করোনাভাইরাসের প্রভাবে পড়ে লম্বা বিরতি। টেকনিক্যাল দিক নিয়ে কাজ করার সুযোগই ছিল না। সম্প্রতি মাঠে ফেরার পর অবশ্য লাল বলেই অনুশীলন করে চলেছেন মুস্তাফিজ। নেটে গতিও বেশ ভালোই মনে হচ্ছে। তবে ডানহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য বল ভেতরে ঢোকানোর নমুনা খুব একটা দেখা যায়নি এই কদিনের অনুশীলনে।
নির্বাচকদের একজন হাবিবুল বাশার অবশ্য মুস্তাফিজের ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন ‘ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট।’ চাপের কারণেই তাকে টেস্টের বাইরে রাখা হয়েছিল, এখন চাপ কম বলেই ফেরানোর ভাবনা।
“মুস্তাফিজকে আমরা চেয়েছিলাম একটু সেভ করতে, ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট ভালো করতে। একজন পেসারের জন্য টানা তিন ফরম্যাটে খেলে যাওয়া কঠিন। ওর ইনজুরির ঘটনাও আছে অনেক। কাঁধে বড় অস্ত্রোপচার হয়েছে। তখন ব্যাপারটা ছিল প্রায়োরিটির, কোনটিকে আমরা বেশি প্রাধ্যান্য দেব। সাদা বলে সে যেহেতু আমাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন, এজন্যই লাল বলে বাইরে রাখা হয়েছিল।”
“এখন আমাদের সামনে টেস্ট ছাড়া আপাতত আর খেলা নেই। লম্বা বিরতিতে যথেষ্টই বিশ্রাম পেয়েছে শরীর। টেস্ট খেলতে ওকে খুব আগ্রহীও মনে হচ্ছে। ছেলেরা সবাই আসলে খেলার জন্য মরিয়া হয়ে আছে। এসব কারণেই ওকে টেস্টের জন্য ভাবছি আমরা।”
এই কদিনের অনুশীলনেও মুস্তাফিজকে বেশ শাণিত মনে হয়েছে হাবিবুলের। তার বিশ্বাস, সত্যিকারের আগ্রহ নিয়ে টেস্ট খেললে এই সংস্করণেও কার্যকর হবেন এই বাঁহাতি পেসার।
“ওকে দেখলাম কয়েকদিন প্র্যাকটিসে, হি লুকস ফিটার অ্যান্ড ফাস্টার। জোরে বল করছে। আরও জোরে ও করতে পারে। একসময় আমরা দেখেছি, ওর গতি নিয়মিত ১৪০ (কিলোমিটার, ঘণ্টায়) স্পর্শ করত। ওর আরেকটা ব্যাপার হলো, ও কিন্তু জিনিয়াস। অনেক কিছুই খুব দ্রুত ধরতে ও করতে পারে।”
“ওর ওপর আমার বিশ্বাস আছে অনেক। ও যদি মন থেকে চায় ভালো করতে, যদি মন দিয়ে খেলে, টেস্টেও অনেক ভালো করবে। অন্তত আমাদের পেসারদের মধ্যে ভালো পারফর্ম করবে, আমি নিশ্চিত।”
তবে মুস্তাফিজকে টেস্ট খেলানোর এখনকার বাস্তবতা সামনেও থাকবে কিনা, নিশ্চিত নন হাবিবুল।
“দেখুন, এটা মানতেই হবে যে এই যুগে একজন পেসারের টানা তিন ফরম্যাট খেলা ভীষণ কঠিন। সামনে যখন সব আবার স্বাভাবিক হবে, প্রচুর খেলা হবে, তখন আবার মুস্তাফিজকে নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। সাদা বলে খেলাই নিশ্চিতভাবে জোর বেশি পাবে তখন।”
“তবে আবারও বলছি, আমি বিশ্বাস করি, মুস্তাফিজ টেস্টেও ভালো করতে পারে এবং তিন সংস্করণই খেলতে পারে। আমাদের ওকে সাবধানে খেলাতে হবে। হয়তো তিন ম্যাচের সিরিজে দুটি খেলল বা দুই ম্যাচের সিরিজে একটি। এভাবে ম্যানেজ করতে হবে।”