ছোটপর্দার উঠতি অভিনেত্রী আশা চৌধুরী শুটিং শেষে বাসায় ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার দিন আড়াই ঘণ্টার হিসাব না মেলায় তাকে বহনকারী মোটরবাইকের চালক শামীম আহমেদকে প্রধান অভিযুক্ত করে এবং অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) রাত ১০টার পরে দারুস সালাম থানায় তার পরিবার মামলাটি করেছে।
শুটিং শেষে গাজিপুর বোর্ড বাজার থেকে ফেরার কথা বলেন মোটরবাইক চালক কিন্তু তার পরিবার থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে বনানী এলাকা থেকে রওনা হয়েছিলেন আশা। ঘটনার দিন সোমবার (৪ জানুয়ারি) আশা তার মাকে ফোন করে জানান যে তিনি বনানীতে আছেন, ২০ মিনিটের মধ্যে বাসায় ফিরবেন।
বনানী থেকে কালশী রোড হয়ে মিরপুর রূপনগর আবাসিক এলাকায় নিজের বাসায় ফেরার কথা ছিল আশার। এ কারণে তার পরিবার থেকে আর কেউ ফোন করেননি। পরে রাত দুটার দিকে আশাকে বহনকারী মোটরবাইক চালক তার মাকে ফোন দিয়ে টেকনিক্যাল মোড়ে আসতে বলেন। তার কিছুক্ষণ পর মোটরবাইক চালক আবার তার মাকে ফোন করে বলেন আশা আর নেই, মারা গেছেন।
আশার মামা দুলাল জানান, মোটরবাইক চালক পুলিশকে তিন রকমের কথা বলেছেন। আশার ফেরার কথা ছিল কালশী হয়ে তাহলে তারা কিভাবে টেকনিক্যাল মোড়ে গেলেন? তার পরিবারের পক্ষ থেকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলে মোটরবাইক চালক শামীম জানান যে তিনি পথ ভুলে গেছিলেন। কিন্তু তার মামা জানান, আশা ঢাকার প্রায়ই সব রাস্তা চেনে, তাহলে পথ ভুল হয় কিভাবে?
আশার মামা আরও জানান, শামীম পুলিশের সামনে বলছে রাস্তা পার হতে গিয়ে আশা দুর্ঘটনায় মারা গেছে। কিন্তু সিসি ক্যামেরার ফুটেজে স্পষ্ট দেখা গেছে মোটরবাইকে থাকা অবস্থায় ট্রাকের ধাক্কায় আশা রাস্তায় পড়ে যান তারপর তার মাথার উপর দিয়ে ট্রাকটি চলে যায়।
আশার মামা দুলাল বলেন, আশাকে নেশা জাতীয় কিছু খাইয়েছে মোটরবাইক চালক শামীম। তা নাহলে আশা সুস্থ থাকলে তাকে শক্ত করে ধরত। আশা যখন বাইক থেকে ছিটকে পড়ে যায় তখন সে একবারও আশাকে ধরেনি। আর শামীম আড়াই ঘণ্টা রাস্তায় কিভাবে ঘুরেছে তার কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। সে কারণে শামীমকে প্রধান আসামি ও ট্রাকচালককে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেছি।
দারুস সালাম জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মিজানুর রহমান মামলার বিষয়ে একটি শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, মঙ্গলবার রাতেই আশার বাবা আবু কালাম বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলায় মোটরবাইক চালক মো. শামীম আহমেদকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
মিজানুর রহমান বলেন, অভিযুক্ত মোটরবাইক চালক শামীম আশা চৌধুরীর পরিবারের ৬/৭ বছরের পরিচিত। তাকে সন্দেহ হওয়ায় আশার পরিবার সড়ক আইনের ১০৫ ধারায় শামীমসহ অজ্ঞাত আরও চারজনকে আসামি করেছে। আমরা মূল ঘটনা উদঘাটন করে অপরাধীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।
উল্লেখ্য, সোমবার (৪ জানুয়ারি) মধ্যরাতে রাজধানীর দারুস সালাম এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় অভিনেত্রী আশা চৌধুরীর মৃত্যু হয়। তিনি ওইদিন রাতে শুটিং শেষে বাসায় ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। পরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ইডেন কলেজে আইন বিভাগের ছাত্রী ছিলেন আশা। ছোটবেলা থেকেই জড়িত মিডিয়ার সঙ্গে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পীও ছিলেন তিনি। একাধিক একক নাটক, টেলিফিল্ম এবং ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেছেন আশা।