মেসির সঙ্গে বার্সেলোনার দ্বৈরথটা বেশ জমে উঠেছে। এরই মধ্যে তিনি বার্সা কর্মকর্তাদের জানিয়ে দিয়েছেন, ন্যু ক্যাম্প ছাড়তে চান। ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দেয়ার আগ্রহের কথাও প্রকাশ করেছেন বার্সার আর্জেন্টাইন অধিনায়ক।
মেসির সঙ্গে বার্সার বিরোধ তৈরি হয়েছে রিলিজ ক্লজ এবং তার সঙ্গে ক্লাবের চুক্তির শেষ তারিখ নিয়ে। নিয়মানুযায়ী গত ১০ জুন ছিল বার্সার সঙ্গে মেসির চুক্তির শেষ দিন। বার্সা বলছে, মেসি যেহেতু ১০ জুনের মধ্যে ক্লাব ছাড়ার বিষয়ে কিছুই বলেনি, সে কারণে অটোমেটিক্যালি আরও এক বছর চুক্তির মেয়াদ বেড়েছে।
কিন্তু মেসি বলছেন, ১০ জুন তার সঙ্গে ক্লাবের চুক্তির মেয়াদ শেষ। এখন তিনি ফ্রি এবং বিনা ট্রান্সফার ফিতেই যেতে পারবেন যে কোনো ক্লাবে। এ নিয়ে কথা বলেছে স্প্যানিশ লা লিগা কর্তৃপক্ষও। তারা দাঁড়িয়েছে বার্সেলোনার পক্ষেই। কিন্তু বিভিন্ন আইনজীবী কিংবা আইনের অধ্যাপকরা বলছেন, আইন কিন্তু মেসির পক্ষেই রয়েছে।
কারণটা হচ্ছে, করোনাভাইরাস। করোনার কারণে মৌসুম শেষ হতে বেশ বিলম্ব হয়েছে। তার ওপর করোনার কারণে পৃথিবীর সব কিছুই যখন ওলট-পালট হয়ে গেছে, তখন মেসির ১০ জুনের তারিখটিরও কোনো মূল্য থাকলো না। মেসির আইনজীবীরা বিশ্বাস করছেন, এ কারণেই এই বিরোধে জিতে যাবেন মেসি।
এ কারণে মেসি মনে করেন, এখন আর তিনি বার্সেলোনার ফুটবলার নন। তিনি এখন মুক্ত। সুতরাং বার্সার প্রাক মৌসুম প্রস্তুতি শুরুর জন্য মেসিকে ডাকা হলেও তিনি যোগ দেননি। এমনকি এর আগে খেলোয়াড়দের যে করোনা টেস্ট করা হয়েছে, সেখানেও অংশ নেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। বার্সা প্রেসিডেন্ট হোসে মারিয়া বার্তেম্যু জানিয়েছেন, মেসি এখনও বার্সারই খেলোয়াড় এবং অধিনায়ক।
কিন্তু মেসি যদি তার দাবিতে জিততে না পারেন? যদি তিনি হেরে যান এবং বার্সায়ই শেষ পর্যন্ত থাকতে হয়, তাহলে কি হবে? এরই মধ্যে তো বার্সেলোনার ট্রেনিং শুরু হয়ে গেছে। অথচ মেসি নিজে অনুপস্থিত। সুতরাং শেষ পর্যন্ত শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধে অপরাধী হওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে কিন্তু মেসি।
মাদ্রিদভিত্তিক ক্রীড়া দৈনিক মার্কা জানিয়েছে, এরই মধ্যে মেসিকে পাঁচ বছরের চুক্তিতে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব দিয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি। বছরপ্রতি ১০০ মিলিয়ন ইউরো করে পাঁচ বছরে ৫০০ মিলিয়ন ইউরো এবং চুক্তিতে স্বাক্ষরের বোনাস হিসেবে আরও ২৫০ মিলিয়ন ইউরো দেয়ার প্রস্তাব করেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবটি।
স্প্যানিশ মিডিয়ার খবর অনুযায়ী মেসি এবং বার্সার বিষয়টি মীমাংসা হবে লা লিগা এবং স্প্যানিশ ফুটবলারস অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারেই। মাদ্রিদভিত্তিক দৈনিক মার্কা বলছে, কোনো খেলোয়াড় যদি কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া ক্লাবের নির্ধারিত কর্মসূচিতে টানা দুদিন অনুপস্থিত থাকে, তাহলে সেটা মারাত্মক অপরাধ বলে গণ্য হবে।
করোনাভাইরাস টেস্টে অংশ না নেয়া এবং টানা দুদিন অনুশীলনে অংশ না নেয়ার কারণে মেসি সেই অপরাধে অপরাধী হবেন বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। মার্কা দাবি করছে, এরই মধ্যে ১১ দিনের পারিশ্রমিক কর্তনের মতো অপরাধ করে ফেলেছেন মেসি। সঙ্গে জরিমানা হবে আরও ২৫ শতাংশ। এমনকি হয়তো বা বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞার মুখেও পড়তে যাচ্ছেন লিওনেল মেসি।
মেসি বার্সেলোনা থেকে বছরে আয় করেন প্রায় ৬১ মিলিয়ন ইউরো। সে হিসাবে এক মাসের কোয়ার্টার হচ্ছে ১.২৩৭ মিলিয়ন ইউরো (বাংলাদেশের মুদ্রায় প্রায় ১২ কোটি টাকা)। ছয়বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী এই ফুটবলার দিনে আয় করেন প্রায় ১ লাখ ৬৭ হাজার ইউরো (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা)। তাহলে ১১ দিনের স্যালারি হবে কত? প্রায় ১৮ লাখ ইউরো (প্রায় ১৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা)।
যদিও ক্লাবের সভাপতি হোসে মারিয়া বার্তেম্যুসহ অন্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা তাদের ক্লাবের সর্বকালের সেরা ফুটবলারকে কোনো শাস্তি দেবেন না।