চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজশাহীতে পানির দাম তিনগুণ বাড়িয়েছে রাজশাহী ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ও দ্রুত এই বর্ধিত বিল প্রত্যাহারের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
বক্তারা বলেন, জনমত না নিয়ে, গণশুনানি ছাড়াই রাজশাহী ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নাগরিকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। করোনাকালে এটা একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। রাজশাহী ওয়াসা গ্রাহকের বিষয়ে কোনও চিন্তা না করেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে রাজশাহীর গণমানুষের আয়ের সঙ্গে সংগতি রেখে গণশুনানির মাধ্যমে পানির দাম নির্ধারণ করার দাবি জানান তারা।
মানববন্ধন থেকে ওয়াসার পানির দাম সমন্বয় না করলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সহ-সভাপতি হারুনুর রশিদের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান, অ্যাড. এন্তাজুল হক বাবু, বীর মুক্তিযোদ্ধা ন্যাশনাল অ্যান্ড ফেডারশনের সভাপতি আলতাফ হোসেন, রাজশাহী মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের অ্যাড. শফিকুল আলম, রাজশাহী ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষধের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রবি রনি, বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল বাসার এবং জামিল বিগ্রেডের প্রধান সমন্ধয়ক দেবাশীষ প্রামানিক দেবু প্রমুখ।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ওয়াসা তাদের সেবার মান বৃদ্ধি করেনি। ওয়াসার পানি পানযোগ্য না। এর ওপর সম্প্রতি ওয়াসার পানিতে কলিফর্ম নামে একটি ব্যাকটেরিয়ার অতিমাত্রায় উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এই পরিস্থিতিতে পানির মূল্য তিনগুণ বাড়ানো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। রাজশাহীতে মানুষের আয়-রোজগারের জন্য তেমন বড় কোনো উৎস নেই, শিল্পকারখানা নেই। করোনাকালে মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য সে রকম নেই। এখানকার মানুষ একেবারে সীমিত আয়ের মধ্যে বসবাস করেন। এ রকম পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত পানির মূল্য চাপিয়ে দিলে মানুষের কষ্ট আরও বেড়ে যাবে।
এদিকে রাজশাহী ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছে, পানির দাম তিনগুণ বাড়ানো হলেও তা উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে অনেকটাই কম। এক হাজার লিটার পানি উৎপাদনে ওয়াসার খরচ হচ্ছে ৮ টাকা ৯০ পয়সা। আর তিন গুণ বাড়ানোর পরও আবাসিক এলাকার গ্রাহক পর্যায়ে পানির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ টাকা ৮১ পয়সা। আর বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য সমপরিমাণ পানির জন্য পরিশোধ করতে হবে ১৩ টাকা ৬২ পয়সা। এর আগে রাজশাহীতে আবাসিক সংযোগে প্রতি এক হাজার লিটার পানির দাম ধরা হতো দুই টাকা ২৭ পয়সা। এছাড়া বাণিজ্যিকে ছিল ৪ টাকা ৫৪ পয়সা।
রাজশাহীর ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, চলতি ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ওয়াসার পানির নতুন মূল্য কার্যকর করা হয়েছে। সময় ও উৎপাদন খরচের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই পানির নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর বর্তমান ওয়াসার পরিধি ও সেবা অনেক বেড়েছে। নতুন নতুন পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পানির দাম সেই তুলনায় বাড়েনি। অথচ এটিই ওয়াসার আয়ের উৎস। এজন্য গ্রাহক ও প্রতিষ্ঠানের সব দিক বিবেচনায় রেখে পানির দাম বাড়ানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) পানি সরবরাহ শাখাকে আলাদা করে ২০১০ সালের ১ আগস্ট রাজশাহী ওয়াসা প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০১১ সালের ১০ মার্চ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়াসার কার্যক্রম চালু হয়। এর আগে ওয়াসা প্রতিষ্ঠার পর ২০১৪ সালে পানির দাম বাড়ানো হয়েছিল।