দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় সম্পদ ক্রোকের আদেশ হওয়া চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসানকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রসিকিউশন শাখায় দায়িত্ব পালনকালে আদালতের হাজতখানার আসামিদের মধ্যাহ্নভোজের বিল হিসাবে ১৩ লাখ টাকার বেশি অপব্যবহারের অভিযোগে নগর পুলিশের অভ্যন্তরীণ তদন্তে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তাকে চাকরি থেকে বরখাস্তের এ সুপারিশ করা হয়। কামরুল হাসান ছাড়াও হাজতখানার তৎকালীন ইনচার্জ পরিদর্শক আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়েছে।
বর্তমানে নগর পুলিশের পিওএম বিভাগে সংযুক্ত এডিসি কামরুল। এর আগে, তিনি এডিসি (প্রসিকিউশন) এবং এডিসি (ক্রাইম) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) আবদুল মান্নান মিয়া বলেন, অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি তদন্তের সময় এডিসি কামরুল ও অন্যদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আমরা এডিসি কামরুলকে বরখাস্তের সুপারিশসহ ফলাফলগুলোকে পুলিশ সদর দফতরে পাঠিয়েছি। আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করেছি, মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
জানা গেছে, এডিসি কামরুল হাসান প্রসিকিউশন শাখায় কর্মরত থাকাকালীন আদালতের হাজতখানার আসামিদের খাবারের বিল হিসেবে ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সরকারি কোষাগার থেকে প্রায় ১৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়।
এর আগে, গত সোমবার (৮ জুলাই) দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এডিসি কামরুল হাসান ও তার স্ত্রী সায়মা বেগমের সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক্রের নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুন্নেছার আদালত।
দুদকের প্রাথমিক তদন্তে কামরুল হাসান নয় কোটি ৭৩ লাখ ২২ হাজার ৪৪ টাকা এবং স্ত্রী সায়মা বেগম এক কোটি ৬২ লাখ ৮৫ হাজার ১৮৮ টাকা জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, কামরুল হাসানের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায়। ১৯৮৯ সালের ১০ জানুয়ারি উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে পুলিশের যোগ দেন তিনি। পরবর্তীতে উপ-পরিদর্শক থেকে পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পেয়ে চট্টগ্রামের কয়েকটি থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপালন করেন কামরুল। মূলত ঐ সময়েই ‘টাকার কুমির’ হয়ে ওঠেন তিনি।
তার ১২ কোটি ৭২ লাখ ৯২ হাজার ৬৯৫ টাকার স্থাবর ও এক কোটি ২৩ লাখ ৩৯ হাজার ২১৬ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য উঠে এসেছে দুদকের অনুসন্ধানে। এছাড়া একই সময়ে তার মোট ৭০ লাখ ২৮ হাজার ২৪১ টাকা পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়ের তথ্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়সহ কামরুল হাসানের মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ১৪ কোটি ৬৬ লাখ ৬০ হাজার ১৫২ টাকার।
এসব সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া গেছে চার কোটি ৮০ লাখ ৩২ হাজার ৮৭ টাকার। সে হিসেবে অর্জিত সম্পদের চেয়ে বৈধ আয়ের উৎস নয় কোটি ৮৬ লাখ ২৮ হাজার ৬৫ টাকা কম।
অপরদিকে, দৃশ্যত কোনো আয় না থাকলেও দুই কোটি ৫৩ হাজার ২৪০ টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন কামরুল হাসানের স্ত্রী সায়মা বেগম। এরমধ্যে এক কোটি ২৫ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদ ও এক কোটি ৯৯ লাখ ২৮ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে।
একই সময়ে সায়মা বেগমের মোট ৩১ লাখ ৩৬ হাজার ৬৫৫ টাকা পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়ের তথ্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়সহ তার মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ দুই কোটি দুই লাখ ৯৯ হাজার ৬২১ টাকা।
এসব সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া যায় ৪০ লাখ ১৪ হাজার ৪৩৩ টাকার। অর্থাৎ তার নামে এক কোটি ৬২ লাখ ৮৫ হাজার ১৮৮ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়।
গত ১৩ মে এ বিষয়ে কমিশন বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করেন দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা। এর পরিপ্রেক্ষিতে কামরুল হাসানের সম্পদ ক্রোকের জন্য আদালতে আবেদন দাখিলের অনুমতি দেয় কমিশন। এরমধ্যে গত রোববার (৭ জুলাই) দুদক চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১ এর সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরান হোসেন আদালতের কাছে পুলিশ কর্মকর্তা কামরুল হাসানের সম্পদ ক্রোকের আবেদন করলে আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেন।
#ডেইলি-বাংলাদেশ