বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে যাওয়া ৬৮ জন প্রবাসী কর্মী আবুধাবিতে প্রবেশ করতে না পেরে দেশে ফিরে এসেছেন। আরও ৫০ জন ফিরবেন এয়ার অ্যারাবিয়ার ফ্লাইটে। এয়ারলাইন্সের টিকিট কেটে, করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট ও ভিসা থাকার পরও তাদের আবুধাবির বিমানবন্দর থেকেই ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে কী কারণে তাদের ফিরতে হলো তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। আর এই যাত্রীদের ফেরত আসার বিষয়ে দায়িত্ব নিচ্ছে না কেউই। তবে এ ঘটনায় কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ-বেবিচক। এছাড়া তাদের ফের আবুধাবি যাওয়ার ব্যবস্থা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে সরকার।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (১৭ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে দেশে ফিরে আসেন ৬৮ জন। আবুধাবি বিমানবন্দর থেকেই তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে তারা ইমিগ্রেশনের সামনে অবস্থান নেন। তাদের ফের পাঠানো ও বিষয়টির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বিমানবন্দর ত্যাগ না করার ঘোষণা দেন ফিরে আসা কর্মীরা। দুপুর পর্যন্ত ইমিগ্রেশন না করেই তারা সেখানে বসে থাকেন।
জানা গেছে, এই যাত্রীদের সবার সঙ্গেই বৈধ ভিসা ও করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট ছিল। যদিও সংযুক্ত আরব আমিরাতে যেতে হলে আগেভাগে যাত্রীর পরিচয় ও নাগরিকত্বের (আইসিএ) বিষয়টি নিশ্চিত করতে ফেডারেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনলাইনে অনুমতি নিতে হতো। কিন্তু এই কর্মীরা কেউই আবুধাবিতে যেতে সে দেশের সরকারের কাছে অনলাইনে পূর্বানুমতির আবেদন করেননি। এদিকে আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাস চেষ্টা করেও সে দেশে তাদের প্রবেশের কোনও ব্যবস্থা করতে পারেনি।
বিমান ও এয়ার অ্যারাবিয়ার কর্মকর্তারা বলছেন, যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করেই যাত্রীদের আবুধাবিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু আবুধাবি বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন এই কর্মীদের প্রবেশ করতে না দেওয়ায় তাদের (এয়ারলাইন্সের) লোকসান হয়েছে। এসব যাত্রীকে সেখানকার বিমানবন্দরে হোটেলে থাকা-খাওয়ার খরচ ও দেশে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে এই লোকসান হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের এক কর্মকর্তা বলেন, অনেক সময় যে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির অধীনে কর্মীরা কাজ করেন, তারা কর্মীদের ফেরত নিতে না চাইলে সে দেশের ইমিগ্রেশনকে আগেই জানিয়ে দেয়, তখন ইমিগ্রেশন আর তাদের প্রবেশ করতে দেয় না। বিমান ও এয়ার অ্যারাবিয়ার ফ্লাইটের ক্ষেত্রেও এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। এই কর্মকর্তা আরও বলেন, যদি ধরেও নেই যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স না হয় কোনও ভুল করেছে, কিন্তু এয়ার অ্যারাবিয়া তো তাদের দেশের এয়ারলাইন্স, তারাও নিশ্চয়ই বিমানের মতো একই ভুল করবে না।
এদিকে সোমবার সন্ধ্যার দিকে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন ফেরত আসা ৬৮ জন বাংলাদেশি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে ফেরত আসা এই ৬৮ জনের একজন টাঙ্গাইলের মো. মঞ্জুর। তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বর মাসে ছুটিতে দেশে এসেছিলেন তিনি। ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরে যেতে করোনা টেস্টও করেছিলেন। কিন্তু আবুধাবি বিমানবন্দর থেকেই তাদের ফিরে আসতে হয়েছে।’
ফিরে আসা জুয়েল মিয়ার বাড়ি কিশোরগঞ্জে। দিনভর বিমানবন্দরে বসে থেকে তিনিও অপেক্ষা করছিলেন, যদি কোনও আশ্বাস পাওয়া যায়। কিন্তু নিরাশ হয়ে বিমানবন্দর ত্যাগ করতে হয়েছে তাকেও। জুয়েল মিয়া বলেন, ‘ডিসেম্বর মাসে ছুটিতে দেশে এসেছিলাম। রিটার্ন টিকিটে ফ্লাইটে গেলাম, কেন আমাদের ফেরত আসতে হলো, কিছুই বুঝতে পারছি না। আমরা চাই সরকার যেন আমাদের দ্রুত ফেরত যাওয়ার ব্যবস্থা করে। ’
এই যাত্রীদের ফেরত পাঠানো প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোকাব্বির হোসেন বলেন, ‘কোনও দেশের ইমিগ্রেশন পার করে দেওয়া কোনও এয়ারলাইন্সের দায়িত্ব নয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাত্রী পরিবহনের যে নিয়ম রয়েছে, তা অনুসরণ করেই তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। একই ফ্লাইটে যাওয়া ১৯ জন যাত্রী কিন্তু আবুধাবিতে প্রবেশ করতে পেরেছেন। বাকিদের সে দেশের ইমিগ্রেশন প্রবেশ করতে না দিলে এয়ারলাইন্সের কোনও দায় নেই। তারপরও তদন্ত কমিটি হয়েছে, সেক্ষেত্রে বিমান দায়ী হলে তারা এদের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নেবে।’
জানা গেছে, আবুধাবি থেকে ফেরত আসা প্রবাসী কর্মীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সোমবার দুপুরে একটার দিকে অনলাইনে জরুরি আন্তমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত যুক্ত হন। তবে আন্তমন্ত্রণালয়ের ওই সভায় তাৎক্ষণিক কোনও সমাধান আসেনি। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আবুধাবি থেকে ফেরত আসার বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) তদন্ত কমিটি গঠন করবে।
এই কমিটি পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ অনুসন্ধান করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেবে। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যাত্রীদের পুনরায় সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্স কিংবা সরকারি ব্যবস্থাপনায় ফের সে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তদন্ত কমিটি প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, ‘পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) থেকে কাজ শুরু করবে। পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে এ ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন জমা দেবে।’