বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘আজকে শুধু ভিন্নমতের জন্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামানকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। কিন্তু কেন? তাঁরা কি কোনো অন্যায় করেছেন? দুর্নীতি করেছেন? তাঁদের চাকরিচ্যুত করার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইন রয়েছে, সে আইনের মধ্যে কি তাঁরা পড়েছেন? নৈতিক স্খলন হলে চাকরিচ্যুত করা যায়।’
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজ শনিবার সকালে এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন রিজভী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামানকে চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদে মানববন্ধনের আয়োজন করে ফিউচার অব বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন। সংগঠনের সভাপতি শওকত আজিজের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ ও মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম। সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফয়সাল প্রধানের পরিচালনায় মানববন্ধনে আরো বক্তব্য দেন জামাল হোসেন, কেজি সেলিম, সোহেল খান, রেজাউল হোসেন অনিক, পাভেল মোল্লা, আল আমিন হোসেন প্রমুখ।
রিজভী বলেন, ‘ড. মোর্শেদকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে কেন, আপনারা জানেন। তিনি জিয়াউর রহমানের বিষয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন সে জন্য। এটাই হচ্ছে অপরাধ। অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামান রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে ফেসবুকে লিখতেন। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হলো। আর চাকরিচ্যুত করা হলো ড. মোর্শেদকে। ওয়াহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা নিষ্পত্তি হয়নি। তার আগেই তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হলো। অর্থাৎ সরকার বিরোধী দল ও মতকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য এত দিন যে কর্মসূচি নিয়েছে, সেটা হলো গুম, অদৃশ্য ও বিচারবহির্ভূত হত্যা। এতেও তারা শান্তি পাচ্ছে না।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘এখন তারা কী করছে, ওদেরকে শেষ করে দিতে হবে। ওরা যেন না খেয়ে থাকে। ক্ষুধার্ত আর অনাহারে থাকে। তাই ভিন্নমতের লোকদের তাদের কর্মকাণ্ড থেকে সরিয়ে দিতে হবে। শিক্ষকদের কর্মকাণ্ড কী? ছাত্রদের পড়ানো, শিক্ষকতা করা। ড. মোর্শেদ তাই করতেন। তিনি ম্যাট্রিক থেকে মাস্টার ডিগ্রি পর্যন্ত সবগুলোই ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া। ম্যাট্রিক ও ইন্টারমিডিয়েটে স্ট্যান্ড করেন। তাঁকে বহিষ্কার করা হলো। ওয়াহিদুজ্জামানও সবগুলোতে প্রথম শ্রেণিপ্রাপ্ত শিক্ষক। না হলে তো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া যায় না। ড. মোর্শেদের অতুলনীয় মেধা। সে জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশের বৃহত্তম প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনি শিক্ষক। তাঁকে ভিন্নমতের কারণেই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।’
রিজভী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তার একটি আলাদা স্বাধীনতা আছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এতই মোসাহেব হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ভিসি সাহেব ড. মোর্শেদকে চাকরিচ্যুত করার ব্যাপারে আইনকানুনের তোয়াক্কা করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো আইনে ড. মোর্শেদ ও ওয়াহিদুজ্জামানকে চাকরিচ্যুত করা যায় না। এখানে আইনের দরকার পড়েনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিধিনিষেধের দরকার পড়েনি। কোনো ন্যায়-ন্যায্যতার দরকার হয়নি। দরকার পড়েছে একজন ব্যক্তির নির্দেশ। সেই হুকুম তামিল করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। আগে দেখতাম শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অনুমতি ছাড়া পুলিশ ঢুকতে পারত না। এখন অবলীলায় ঢুকে যায়। এখন ভিসি কোনো আইনের তোয়াক্কা না করেই চাকরিচ্যুত করছে যারা ভিন্ন মতাবলম্বী, বিএনপি করে বা অন্য কোনো মতে বিশ্বাসী। এই হচ্ছে আজকের অবস্থা। অর্থাৎ বিএনপির লোক খেতে পারবে না, তোমাদের খাওয়ার অধিকার নেই, চলাচলের অধিকার নেই, মতপ্রকাশের অধিকার নেই, বাঁচার অধিকার নেই।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমার যদি চাকরি না থাকে, খাব কী করে? সন্তানদের পড়ালেখা করাব কী করে? সরকারকে বলব, এই অমানবিকতার অবসান ঘটান। ভাবছেন, আপনার অনেক ক্ষমতা, ধরে নিয়ে গুম করবেন, জেলে ভরে দেবেন। কিন্তু কখন যে আপনার সিংহাসন চোরাবালির মধ্যে ডুবে যাবে, আপনি সেটা টেরই পাবেন না। অবিলম্বে ড. মোর্শেদ ও ওয়াহিদুজ্জামাকে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানাচ্ছি।’
অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, ‘দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে। এখন শিক্ষাব্যবস্থার ওপর আঘাত হেনেছে। শিক্ষক জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু স্বাধীন মতপ্রকাশের কারণে তাঁদের বহিষ্কার করা হয়েছে। যেটা চরম অন্যায় ও অমানবিক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ভিন্নমতের শিক্ষকদের দমন করা হচ্ছে। আসুন, ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটাই।’